মুহাম্মদ আবু হেলাল শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা নলকুড়া ইউনিয়নের গুমড়া গ্রাম দীর্ঘদিন ধরেই মাদক কারবারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় চোরাচালানিরা সুযোগ পেলেই বিভিন্ন ধরনের মাদক দেশে আনতে এই পথকে ব্যবহার করে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় মাদক ব্যবসার বিস্তার ঘটালেও অনেক সময় তা দমন করা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি প্রশাসন মাদকবিরোধী অভিযানে আরও শক্ত অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে কুখ্যাত মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত মহরম আলীর ছেলে মাজাহারুলের বসতবাড়িতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাদকবিরোধী এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন এসআই শামছুল হক ও এসআই শফিউল্লাহ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, মাজাহারুলের বাড়িতে বিপুল পরিমাণ আমদানিনিষিদ্ধ ভারতীয় মদ মজুত রয়েছে। এরপর রাতের অন্ধকারে বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ দল। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রধান আসামি মাজাহারুল দৌড়ে পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও বাড়ি তল্লাশির সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোট ৪৮৯ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার মদের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, মাজাহারুল দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। সীমান্তসংলগ্ন হওয়ায় চোরাইপথে ভারত থেকে মদ এনে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতো সে। তার পরিবারও এই মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা অনেকের। যদিও পরিবারের কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। স্থানীয়দের মতে, প্রভাবশালী একটি চক্র তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে বলেই এতদিন তার ব্যবসা বন্ধ হয়নি। পুলিশের সাম্প্রতিক কঠোর অবস্থান তাদের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
অভিযান নিয়ে ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল আমিন বলেন, “মাজাহারুল বহুদিন ধরে পুলিশের কাছে ও স্থানীয়দের কাছে কুখ্যাত মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অর্ধ-ডজনের বেশি মাদক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তার বাড়িতে অভিযান চালাই এবং বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মদ জব্দ করি। এবারও সে পালিয়ে গেছে, তবে তাকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, মাদক সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। বিশেষ করে সীমান্ত প্রত্যন্ত এলাকায় যুব সমাজকে মাদকে জড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে হলে নিয়মিত অভিযান চালানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তাই পুলিশ কঠোর নজরদারির পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহ ও অভিযান জোরদার করেছে। উদ্ধারকৃত মদের বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে এলাকার সচেতন নাগরিকরা পুলিশের এই সফল অভিযানের প্রশংসা করেছেন। তাদের দাবি, এ ধরনের অভিযান আরও তীব্র করা হলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মাদক ব্যবসা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। একই সঙ্গে তারা মাদক কারবারির জন্মদাতা চক্রগুলোকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
মাদকবিরোধী অভিযানের ফলে ঝিনাইগাতী এলাকায় নতুন করে স্বস্তির বাতাস বইছে। স্থানীয়দের আশা, নিয়মিত পুলিশের কঠোর নজরদারি ও কঠিন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে একদিন সীমান্তের এ অঞ্চল পুরোপুরি মাদকমুক্ত হবে। 