স্টাফ রিপোর্টার
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, প্রশাসনিক অনুমোদন ও ইটভাটা নীতিমালা না মেনেই ফসলি জমিতে একের পর এক ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়ম–নীতির তোয়াক্কা না করেই পীরগঞ্জ–বীরগঞ্জ সড়কের দুই পাশজুড়ে কিলোমিটারের মধ্যে বহু ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই সম্পূর্ণ অবৈধ।
সরেজমিন দেখা যায়, পৌর শহর থেকে মাত্র ২–৩ কিলোমিটার দূরে চাপোড় এলাকার সিন্দুর্গা মৌজাসহ আশপাশে প্রায় ২০–২৫ বিঘা ফসলি জমি দখল করে ১৬টি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ভাটার কোনোটিরই পরিবেশ ছাড়পত্র বা প্রশাসনিক অনুমতি নেই বলে জানা গেছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন, ২০১৩ অনুযায়ী—
ইটভাটা স্থাপনে ইউপি চেয়ারম্যানের সুপারিশ ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
ফসলি জমির টপ–সয়েল কাটলে প্রথমবার ২ বছর কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা,
পুনরাবৃত্তিতে ২–১০ বছর কারাদণ্ড বা ২–১০ লাখ টাকা জরিমানা।
লাইসেন্স ছাড়া ভাটা পরিচালনায় ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।
আবাসিক, জলাভূমি, বনভূমি ইত্যাদি এলাকায় ভাটা স্থাপনে ১ বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।
কাঠ দিয়ে ইট পোড়ালে ৩ বছর কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা।
কিন্তু পীরগঞ্জে এসব নিয়ম কোনো ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, ইটভাটা মালিকরা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অবাধে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অনেক ভাটায় ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে বড় বড় স্তুপ তৈরি করা হয়েছে। একটি ভাটায় ৪–৫টি মাটির স্তুপ মজুত রয়েছে, যার বেশিরভাগই ফসলি জমির টপ–সয়েল। বিশেষজ্ঞদের মতে,
জমির উপরিভাগের মাটি সরালে জমি ১৫–২০ বছর পর্যন্ত উৎপাদনক্ষমতা হারায়।
এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী, সমাজসেবক ও মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ—পীরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ইটভাটা নির্মাণে আইন ভঙ্গ হলেও উপজেলা প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেই।
তারা বলেন,
“অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ, কৃষি ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।”
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।