স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ বেল্লাল হোসাইন নাঈম
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা আগামী বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার পর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, বুধবার বাদ জোহর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শেরেবাংলা নগরে তাকে সমাহিত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় তিনি বলেন, “গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীন ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।” জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির মুহূর্তে তিনি দেশবাসীকে মরহুমার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানান।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. ইউনূস গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “জাতি তার এক মহান অভিভাবককে হারালো।” তিনি মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আগামীকাল বুধবার একদিনের সাধারণ ছুটি এবং তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগ থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।
মৃত্যুর সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে হাসপাতালজুড়ে শোকের আবহ নেমে আসে।
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পর তিনি মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও পরিচিত। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি আপসহীন নেতৃত্ব ও দৃঢ় অবস্থানের জন্য পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।