মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ, দেওয়ানগঞ্জ প্রতিনিধি
“ভিক্ষা নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে একটা চাকরি চাই”—এভাবেই নিজের প্রতিবন্ধকতা জয় করে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরআমখাওয়া ইউনিয়নের লম্বাপাড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা আক্তার (৩০)।
প্রায় এক দশক আগে শাহিদাকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি মানবিক প্রতিবেদন দেশ-বিদেশের মানুষের নজর কাড়লেও দীর্ঘমেয়াদী কোনো সহায়তা বা কর্মসংস্থানের সুযোগ মেলেনি তার। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে বয়স, তবে কমছে না তার স্বপ্ন—নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।
শাহিদা বলেন, “আমি কারো দয়া-ভিক্ষা চাই না। আমি কম্পিউটার চালাতে পারি, ওয়ার্ড, এক্সেল, টাইপিং জানি। আমি চাই যোগ্যতার ভিত্তিতে একটা চাকরি। সমাজের অনেক অল্পশিক্ষিত মানুষও চাকরি পায়, তাহলে আমি কেন পাব না? আমার কী চাকরি করার অধিকার নেই?”
২০১০ সালে এসএসসি, ২০১২ সালে এইচএসসি এবং ২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (বিএ) পাশ করেন শাহিদা। পাশাপাশি মাইক্রোসফট অফিসসহ বিভিন্ন কম্পিউটার প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি। কিন্তু শুধুমাত্র শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে চাকরির ভাইভা পর্যন্ত গিয়েও বারবার বাদ পড়তে হচ্ছে তাকে।
এর আগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পক্ষ থেকে একটি কম্পিউটার উপহার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘরের ছাউনি ভালো না থাকায় বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায় সেটিও।
শাহিদার এই অবস্থার ব্যাপারে সানন্দবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বলেন, “শাহিদা আমাদের কলেজের একজন মেধাবী ছাত্রী ছিল। আমি সরকারের কাছে তার চাকরির জন্য আবেদন জানাই।”
চরআমখাওয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, “শাহিদা একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে, তার জন্য একটি স্থায়ী কর্মসংস্থান অত্যন্ত জরুরি।”
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, “সরকার যদি শাহিদার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে, তাহলে সে পরিবারসহ সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারবে।”
পিতৃহীন হতদরিদ্র পরিবারে মানসিক প্রতিবন্ধী ভাই ও একমাত্র উপার্জনক্ষম ছোট ভাইকে নিয়ে দিন কাটানো শাহিদা আজ সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে ন্যায্য অধিকারের দাবিতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন—“আমি কি এই দেশের নাগরিক নই? তাহলে কেন আমার প্রাপ্য সম্মানের চাকরি আমি পাচ্ছি না?”
শেষ কথায়:
একজন স্নাতক পাশ, কম্পিউটার দক্ষতাসম্পন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীর চাকরির আকুতি শুধু দয়া নয়—এটি একটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সরকার ও সমাজ তার এই ন্যায্য দাবির পাশে দাঁড়াবে—এটাই এখন সময়ের দাবি।