আবুল হাশেম
রাজশাহী ব্যুরো:
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) চলমান অচলাবস্থা ও নাগরিক সেবা ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে রাজশাহী সচেতন নাগরিক সমাজ ও রাসিকের ঠিকাদারবৃন্দ।
রবিবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে দশটায় শহরের শাহ্ ডাইন কমিউনিটি সেন্টারের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে রাসিকের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদাসীনতার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
লিখিত বক্তব্যে বক্তারা বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দেশের অন্যতম নাগরিকসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সুনাম অর্জন করলেও বর্তমানে তা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। একের পর এক সেবা ক্ষেত্রে ভোগান্তি এবং প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় নগরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
মূল অভিযোগসমূহের মধ্যে রয়েছে:
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ও নাগরিক সনদপত্র পেতে দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি।
ভবন নির্মাণে এনওসি নিতে তিন-চার দিনের পরিবর্তে সময় লাগছে প্রায় আড়াই মাস।
নতুন হোল্ডিং নম্বর ও ট্রেড লাইসেন্স পেতে জটিলতা এবং অনৈতিক চাপ।
ফ্লাইওভারসহ চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি ও স্থবিরতা।
ঠিকাদারদের বিল মাসের পর মাস আটকে রেখে নির্মাণ কাজ স্থগিত হওয়া এবং ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি।
ভাতাভোগী নাগরিকদের অর্থ পেতে অসুবিধা।
স্ট্রিট ল্যাম্প মেরামতের অভাব, পত্রিকা বিজ্ঞাপন বিল আটকে রাখা এবং সচিবের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ।
বক্তারা সরাসরি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম এবং সচিব মোছাঃ রুমানা আফরোজ-এর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, এই দুই কর্মকর্তার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাসিকে কাজের গতি থেমে গেছে এবং সেবাগ্রহীতারা বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বিশেষভাবে সচিব রুমানা আফরোজের বিরুদ্ধে “ফ্যাসিস্ট ধাঁচের আচরণ”, ফাইল আটকে রাখা, সেবা না দেওয়া এবং অনিয়মের একাধিক অভিযোগ তুলে ধরা হয়। বক্তারা জানান, সচিবের বিরুদ্ধে আগে কর্মরত দপ্তরেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল এবং এখনো তিনি তা অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাগজপত্রেও তিনি স্বাক্ষর করেন না।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, সিটি কর্পোরেশনে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ না হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার জনাব খোন্দকার আজিম আহমেদের উপর অপ্রয়োজনীয় বোঝা চাপানো হয়েছে, যা সেবা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বক্তারা দ্রুত স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানান, যাতে নগরসেবার মান ও গতিশীলতা ফিরে আসে।
বক্তব্যে বলা হয়, কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা এবং অসৎ উদ্দেশ্যে গৃহীত কর্মকাণ্ডে সরকার ও সিটি কর্পোরেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি বিদ্যুৎ বিল সময়মতো না দেওয়ায় রাসিককে গুণতে হয়েছে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা, যা জনগণের অর্থের অপচয়।
সবশেষে বক্তারা, রাজশাহীবাসীর ভোগান্তি নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সচিব মোছাঃ রুমানা আফরোজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা বলেন, “আমরা চাই একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও গতিশীল সিটি কর্পোরেশন।”
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সচেতন নাগরিক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।