শরিফা বেগম শিউলী
স্টাফ রিপোর্টার
রংপুর নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মনোহরপুর ও বড়বাড়ী মৌজার “মনোহরপুর সিংগিমারী বিল জলমহল” নিয়ে জবরদখল, মাছ চুরি ও গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার মারুফ গংদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, “কুন্ডি কিসামত মাধবপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড” দীর্ঘ ১২ বছর ধরে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বৈধভাবে লিজ নিয়ে উক্ত জলমহলে মাছ চাষ করে আসছে। পাশাপাশি বিল সংলগ্ন জমিতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কলাসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল সমিতির সদস্যরা।
সমিতির পক্ষ থেকে বিল দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা গোলাম আজম জানান, দেশের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের সুযোগ নিয়ে মারুফ গং বিল দখলের চেষ্টা করে আসছিল এবং একাধিকবার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। বিষয়টি থানায় লিখিতভাবে জানালে পুলিশ এসে উভয় পক্ষকে সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া কেউ জলমহল দখল করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়।
কিন্তু অভিযোগে আরও বলা হয়, এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত ৪ জুলাই সকাল ১০টার দিকে মারুফ ও তার সহযোগীরা জোরপূর্বক জলমহলে প্রবেশ করে দুপুর ১২টার মধ্যে বিল থেকে প্রায় ৫ থেকে ৭ মণ মাছ উত্তোলন করে নিয়ে যায়, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া তারা বিলে সংলগ্ন জমিতে থাকা কলাবাগানের ফল ধরা গাছ কেটে ফেলে দেয়, যার ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
ভুক্তভোগী সমবায় সদস্যরা জানান, এক মাস আগে মারুফ গং পোনা মাছ ছাড়তে এলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা শারীরিকভাবে হেনস্তা করে এবং গুলি করার হুমকি দেয়। তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ভবিষ্যতে মারাত্মক ক্ষতি করার ভয় দেখায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মারুফকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, তারা নিয়মমাফিক আবেদন করে লিজ পেয়েছেন এবং তাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে। কাগজ দেখাতে বলা হলে তিনি বলেন, “আমি এখন ঢাকায় আছি, আপনারা একটু অপেক্ষা করেন, আমার পক্ষে লোক পাঠাচ্ছি।” পরে ফেরদৌস, মোস্তফা ও আজাদ নামের তিনজন এসে জানান, তারা প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিয়েছেন এবং ডিসি অফিসের নির্দেশে বিল দখল করেছেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, “এই জলমহল নিয়ে আগেও অভিযোগ এসেছিল। পুলিশ গিয়ে তাৎক্ষণিক সমাধান করেছিল। আবারো অভিযোগ এসেছে, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সরকারি জলমহল দখল করে মাছ চুরি ও গাছ কাটা শুধু অনৈতিক নয়, এটি অপরাধ। তারা দ্রুত জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অপরদিকে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে, প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ ছাড়া তারা ভবিষ্যতে সুষ্ঠুভাবে মাছ চাষ পরিচালনা করতে পারবেন না।