নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর:
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সিলিন্ডার গ্যাসের লিকেজ থেকে রান্নাঘরে আগুন লেগে গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন সত্তরোর্ধ্ব রহিমা খাতুন নামে এক বৃদ্ধা। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (২০ জুলাই) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে নালিতাবাড়ী শহরের কাচারীপাড়া মহল্লায়।
রহিমা খাতুন শেরপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোকছেদুর রহমান লেবু এবং বর্তমান পুলিশ সুপার মোকলেছুর রহমান রিপন-এর মা। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তিনি ছোট ছেলের বাসার রান্নাঘরে প্রবেশ করে গ্যাসের চুলা চালু করেন। কিন্তু রান্নাঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় লিকেজ হওয়া গ্যাস ঘরে জমে ছিল। চুলা চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে আগুন ধরে যায়।
তৎক্ষণাৎ আগুনের প্রচণ্ড চাপ ও বিস্ফোরণের শব্দে রান্নাঘরের কাঠের দরজা ফেটে যায় এবং রহিমা খাতুন চিৎকার দিয়ে কোনোমতে বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরে পরিবারের সদস্যরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান এবং পরে তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নালিতাবাড়ী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফাহাদ রহমান বলেন, “রহিমা খাতুনের শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বিশেষ করে মুখ, হাত, বুক ও পিঠের অংশ দগ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা জানান, রহিমা খাতুন একজন সাদাসিধে ও ধর্মপরায়ণ নারী। হঠাৎ এ দুর্ঘটনায় তারা খুবই মর্মাহত। স্থানীয়রা গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপদ ব্যবহার ও নিয়মিত চেকআপের ওপর জোর দেন।
নালিতাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের সময় সবসময় জানালা-দরজা খোলা রাখা এবং চুলা চালু করার আগে গন্ধ পেলেই পরীক্ষা করে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “গ্যাস জমে গেলে যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।”
এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি, তবে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে।
পরিবারের সদস্যরা রহিমা খাতুনের জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন। তারা জানান, তিনি এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং সার্বক্ষণিক চিকিৎসক তত্ত্বাবধানে আছেন।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি আবারও সচেতনভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়। স্থানীয় প্রশাসন এবং সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলো জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।