দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় এক অবিবাহিত তরুণীর নাম অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভাতার টাকা তোলা হচ্ছে এক ইউপি সদস্যার জামাইয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে। অভিযুক্ত ইউপি সদস্যা নিজেই স্বীকার করেছেন অন্য নারীর নামে কৌশলে এই ভাতা কার্ড করিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে আংগারপাড়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মোছা. নুরনাহার বেগমের সুপারিশে। অভিযোগ উঠেছে, তার মেয়ে কম বয়সী হওয়ায় তিনি তার জামাইয়ের স্ত্রীর নামে ভাতা কার্ড করতে না পেরে ভুয়া তথ্য দিয়ে অন্য একজন অবিবাহিত তরুণী—আক্তারিনা আক্তারের নাম ব্যবহার করে গর্ভবতী দেখিয়ে ভাতা চালু করান।
জানা যায়, তালেব মেম্বারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ওহাবের মেয়ে আক্তারিনা আক্তার একজন অবিবাহিত তরুণী। তিনি পিতামাতাহীন হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ভাইয়ের দেখাশোনা করেন। সম্প্রতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের ‘ভি.ডব্লিউ.বি’ কর্মসূচির (মাসিক ৩০ কেজি চাল) জন্য আবেদন করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তার নামে ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা চালু রয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ভাতার আবেদনে তার স্বামীর নাম “পায়েল” উল্লেখ করা হয়েছে এবং একটি ভুয়া গর্ভাবস্থার সনদ সংযুক্ত করা হয়। সেইসাথে, যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে, সেটি আক্তারিনার নয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে নম্বরটি ইউপি সদস্য নুরনাহার বেগমের জামাইয়ের।
ঘটনার সত্যতা জানতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যার জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, “ভাতার কার্ড যার নামে, সেই আমার স্ত্রী।” তবে যাচাই করে দেখা যায়, তার স্ত্রীর নাম সুরাইয়া আক্তার, আক্তারিনা নয়।
ভুক্তভোগী আক্তারিনা বলেন, “আমি অবিবাহিত। মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। যারা এই জালিয়াতিতে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”
অভিযুক্ত ইউপি সদস্যা মোছা. নুরনাহার বেগম মুঠোফোনে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “আমার মেয়ে অসহায় ও কম বয়সী। তাই অন্যজনের এনআইডি ব্যবহার করে ভুলবশত এই কার্ডটি করিয়েছি।”
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আফসানা মোস্তারি বলেন, “ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। ভাতাটি বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে এবং তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার বলেন, “জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এমন অনিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করা হবে।”
এই ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসন, সমাজ ও জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির প্রশ্ন সামনে এনেছে।