
শেরপুর প্রতিনিধি:
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে বিলুপ্ত করে ভিন্ন অধিদপ্তরে অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রস্তাবের প্রতিবাদে এবং পেশাগত উন্নয়ন-সংক্রান্ত ৮ দফা দাবিতে শেরপুরে নার্সদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ)-এর ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশ শনিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সদর হাসপাতাল ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ডিপ্লোমা, বিএসসি ও বিভিন্ন ক্যাডারের শতাধিক নার্স এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় নার্সরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও বহু বছর ধরেই তাদের দাবি-দাওয়া উপেক্ষিত। করোনাকালসহ বিভিন্ন মহামারির সময় নার্সরা frontline-এ থেকে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন। প্রয়োজনীয় জনবল সংকট, পর্যাপ্ত সুরক্ষা উপকরণের অভাব, অতিরিক্ত দায়িত্বের চাপ—সবকিছু সত্ত্বেও নার্সরা কখনো দায়িত্ব পালনে পিছু হটেননি। অথচ তাদের পেশাগত মর্যাদা, পদোন্নতি কাঠামো, প্রশাসনিক স্বীকৃতি এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এখনো সন্তোষজনক নয়।
বক্তারা উল্লেখ করেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর দেশের নার্সিং পেশাকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে বহু বছর ধরে কাজ করে আসছে। অথচ হঠাৎ করে এই অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে অন্য অধিদপ্তরে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নার্সদের অবস্থান ও মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন তারা। বক্তাদের দাবি—নার্সদের পেশাগত স্বার্থ রক্ষায় বর্তমান কাঠামো আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন, দুর্বল করা নয়।
নার্সদের ৮ দফা প্রধান দাবির মধ্যে রয়েছে—
১. নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর অক্ষুণ্ন রাখা ও আরও শক্তিশালী করা।
২. প্রশাসনিক পদে নার্সদের প্রাপ্য অংশ নিশ্চিত করা।
৩. নার্সদের পদবী কাঠামো আধুনিকীকরণ ও সময়মতো পদোন্নতি।
৪. নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।
৫. হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ।
৬. নার্সদের জন্য আলাদা ভাতা ও ঝুঁকি ভাতা পুনর্বিন্যাস।
৭. নার্সিং কাউন্সিলকে স্বশাসিত ও কার্যকর করা।
৮. কর্মস্থলে হয়রানি, হুমকি ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন।
নার্সরা অভিযোগ করেন, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ৭০ শতাংশ দায়িত্ব নার্সরা পালন করলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অনেক সময় প্রশাসনিক জটিলতার কারণে নার্সদের বদলি, প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতি বছরের পর বছর আটকে থাকে। এর ফলে তাদের মনোবল ভেঙে যায় এবং স্বাস্থ্যসেবার মানও ব্যাহত হয়।
বক্তারা বলেন, সরকার যদি হাসপাতালের সেবা উন্নত করতে চায়, তবে প্রথমেই নার্সদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে হবে। কারণ হাসপাতালের প্রতিটি কার্যক্রমে নার্সরা মূল ভূমিকা পালন করেন—চিকিৎসকের নির্দেশ পালন, রোগীর সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান, জরুরি সেবা, ওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত নার্সদের উপস্থিতি অপরিহার্য।
সমাবেশ শেষে নার্সরা একটি বিক্ষোভ র্যালি বের করেন, যা হাসপাতাল চত্বরে প্রদক্ষিণ করে। র্যালি শেষে সংগঠনের নেতারা জানান—দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের নার্সরা পর্যায়ক্রমিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। তারা আশা করেন, সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপে নার্সিং পেশার দীর্ঘদিনের বৈষম্য ও অবহেলা দূর হবে এবং নার্সদের যথাযথ মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে।