নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) টানা চার দিনের উত্তেজনার পর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এভারগ্রিন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেডের শ্রমিকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। এতে এক শ্রমিক নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বিজিবি, সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত শ্রমিকের নাম হাবিব ইসলাম (২০)। তিনি ইপিজেডের ইকো কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন এবং সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে নীলফামারীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরহান তানভিরুল ইসলাম নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সকালে শ্রমিকরা ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে। এসময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার খোঁজে এলাকা ছেড়ে যায়।
এর আগে সোমবার কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্দোলনের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী নোটিশে পুনরায় কারখানা চালুর কথা জানানো হবে।
শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী উৎপাদন টার্গেট কমানো, ওভারটাইম নিশ্চিত করা, যথাযথভাবে ছুটি প্রদান, বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ, আবাসন ও প্রমোশনের জটিলতা নিরসন, সকাল ৭টার আগে ডিউটি না রাখা, গর্ভবতী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা এবং ক্ষুদ্র সমস্যায় চাকরিচ্যুতির সংস্কৃতি দূর করা সহ ২০ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
শ্রমিক সোহাগ হোসেন বলেন, “আমরা টানা চার দিন শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আলোচনায় না এসে উল্টো কারখানা বন্ধ করে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে।”
এ বিষয়ে নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাইদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরিস্থিতি এখনো অস্থির। এলাকাবাসী আশা করছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। নিরাপত্তা বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
উত্তরা ইপিজেডের এই আন্দোলন ও সংঘর্ষ স্থানীয় শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একই সঙ্গে এটি নির্দেশ করছে, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা ও সংলাপ অপরিহার্য।