মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে একের পর এক খুন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, গুম আর বোমা হামলার মতো ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির অভাবকে পুঁজি করে তারা এলাকায় দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করছে। কৃষক দলের তরিকুল ইসলাম হত্যা, নাউলী গ্রামের হাসান হত্যা, শিশু নাদিরা হত্যা ও শফিকুল ইসলাম গুমের মতো আলোচিত ঘটনার রহস্য এখনো উদঘাটিত হয়নি। এতে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে শুভরাড়া ইউনিয়নে বোমা হামলা ও গুলির ঘটনায় শামীম নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন এবং তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৪ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি মারা যান। এ ধরনের ঘটনা এলাকায় ছিনতাই, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ডের প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভয়নগরে মাদক ও অনলাইন জুয়ার প্রসারই সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মূল চালিকা শক্তি। ভৈরব নদের ওপারে হিদিয়া, শংকরপাশা, মধ্যপুর, বাঘুটিয়া, রানাগাতী, শুভরাড়া ও সিদ্দিপাশাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা। এখানে তারা জমি দখল, চাঁদাবাজি ও হত্যার মতো অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নীরবতা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের দুর্বলতার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সন্ত্রাসীদের কাছে অসংখ্য অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর সেনাবাহিনী বেশ কিছু অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করলেও এসব অপরাধ ঠেকানো যায়নি।
এছাড়া নাগরিক সমাজের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে কিছু সাংবাদিক সন্ত্রাসীদের অপরাধ ঢেকে রাখেন বা তাদের প্রভাবশালী হিসেবে প্রচার করেন, যাতে সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে না পারে। তাদের প্রশ্ন—যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকতার ভেতর থেকেই সন্ত্রাসীদের আশ্রয় তৈরি হয়, তাহলে অভয়নগরের মানুষ আশ্রয় খুঁজবে কোথায়?
অভয়নগর থানা পুলিশের দাবি, তারা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে নাগরিক সমাজের মতে, অবিলম্বে কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান না চালালে অভয়নগর শিগগিরই “অপরাধের জনপদে” পরিণত হবে।