মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি :
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে একটি ধানক্ষেতে কর্দমাক্ত মাটির নিচে অর্ধপোতা অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। নিহত কিশোরের নাম ইসমাইল (১৭)। সে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের ডাকাবর গ্রামের বাসিন্দা ঝালমুড়ি বিক্রেতা আব্দুল্লার ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট মহারশি নদীর প্রবল স্রোতে ভেসে আসা লাকড়ি ধরতে গিয়ে ইসমাইল নিখোঁজ হয়। পরিবার ও স্থানীয়রা অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান পাননি। পরে শুক্রবার ভোরে কয়েকজন কৃষক ধানক্ষেতে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে কিশোরের মরদেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল আমিন বলেন, “নদীতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা রুজু করা হয়েছে।”
অপরদিকে, ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল মরদেহ উদ্ধারের খবরে শোক প্রকাশ করে বলেন, “একটি অমূল্য প্রাণের এইভাবে ঝরে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা নিহতের পরিবারের পাশে আছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নদীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সকলকে আরও সচেতন হতে হবে।”
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ী ঢলের পানিতে প্রতিবছরই নানা দুর্ঘটনা ঘটে। নদীতে ভেসে আসা লাকড়ি কিংবা বাঁশ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় অনেকে। ইসমাইলও সেই চেষ্টায় নদীর প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারায়। তার অকাল মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতম, আর এলাকায় বইছে গভীর শোকের ছায়া।
গ্রামের মানুষেরা জানান, ইসমাইল পরিশ্রমী ও সবার প্রিয় একটি ছেলে ছিল। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়নে পড়াশোনার পাশাপাশি ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসারের হাল ধরতে চাইত সে। কিন্তু মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার জীবন থেমে গেল পাহাড়ী ঢলের স্রোতে।
এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল নদীর ধারে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, পাহাড়ী ঢল প্রতিরোধ করা না গেলেও আগাম সতর্কীকরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে এ ধরনের দুর্ঘটনা কমে আসবে।
কিশোর ইসমাইলের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ গ্রামবাসী তার অকাল মৃত্যুতে শোকাভিভূত হয়ে পড়েছে। মা-বাবার বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ডাকাবর গ্রামের আকাশ-বাতাস।