
মনজু হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়ন পরিষদে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আজগর আলী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) মোঃ ময়নুল হকের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা।
অভিযোগ অনুযায়ী, দণ্ডপাল ইউনিয়নের অন্তত ২১টি ইটভাটা থেকে প্রতি মৌসুমে ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর আদায় করা হলেও সেই টাকা ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি হিসাব নম্বরে জমা না করে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ আজগর আলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায়, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ময়নুল হকের সহযোগিতায় তিনি একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে স্থানীয় প্রশাসন ও তদারকি সংস্থাগুলোকেও উপেক্ষা করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দণ্ডপাল ইউনিয়নের সাবেক সচিব ও বর্তমান মারেয়া ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ ময়নুল হক বলেন,
“ইটভাটা থেকে কয়েক বছর ধরে কোনো কর আদায় হয়নি।”
একই বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান মোঃ আজগর আলীও। তবে ইটভাটা মালিকরা বলছেন, বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
দণ্ডপাল ইউনিয়নের একাধিক ইটভাটা মালিক ও ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরুতেই ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর দিতে হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রশিদ দেওয়া হয় না। কেউ কেউ মাত্র ১৫ হাজার বা ৫ হাজার টাকার রশিদ পান।
মেসার্স এমআরবি ব্রিক্সের মালিক মোকবুল হোসেন বলেন,
“গত মৌসুমে ইউনিয়ন পরিষদে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু রশিদ কেটে দিয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকার।”
এসবিবি ব্রিক্সের ম্যানেজার খগেশ্বর বর্মণ বলেন,
“গত বছর পরিষদে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি, অথচ রশিদ দিয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ টাকার। এবারও ৭৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদের সরবরাহকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিভিন্ন উৎস থেকে (হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশান, নাগরিকত্ব, হাটবাজার, গাছ কর্তন, প্রত্যয়ন, পেশাকর, পশু সনদ ইত্যাদি) রাজস্ব আয় নিম্নরূপ—
২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় ৫,০৩,৮২১ টাকা,
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮,২০,৮১৯ টাকা,
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১,৯৮,৮৪৩ টাকা,
২০২৫-২৬ অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত ৪,২৩,৮৬৮ টাকা।
অর্থাৎ, রাজস্ব আয় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি দেখানো হলেও ইটভাটাগুলোর প্রকৃত কর জমা হয়নি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
স্থানীয় সরকারের বিধি অনুযায়ী, ৪০ লাখ টাকার বেশি মূলধনের যেকোনো ব্যবসা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বছরে ৫০ হাজার টাকা কর দিতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য ফি মিলে এই পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭৫ হাজার টাকা।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মোঃ আজগর আলী চেয়ারম্যান পদে যোগদানের পর থেকেই রাজস্ব আদায়ের এই অনিয়ম শুরু হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দণ্ডপাল ইউনিয়নের বর্তমান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আওলাদ হোসেন বলেন,
“আমি নতুন এসেছি। দায়িত্ব নিয়ে প্রতিটি ইটভাটা ও কারখানাকে নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ দিয়েছি যাতে রাজস্ব সঠিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদে জমা হয়।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এতদিন কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন তদন্ত হলে দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজস্ব আদায়ে বিপুল দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছেন সচেতন নাগরিকরা।
ইউনিয়নে ২১টি ইটভাটা থেকে বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আদায়।
রশিদ দেওয়া হয় ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকার, বাকিটা অজানা গন্তব্যে।
চেয়ারম্যান আজগর আলী ও সাবেক সচিব ময়নুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
স্থানীয়রা স্বচ্ছ তদন্ত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।