
হাবিবুর রহমান লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
মেঘনা উপকূলীয় এলাকা লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা। সাড়ে সাত লাখ মানুষের এই অঞ্চলে অধিকাংশ বাসিন্দার প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ, নদীতে মাছ শিকার এবং ইটভাটায় শ্রম দেওয়া। চরাঞ্চলের মানুষের আয়-রোজগারের সবচেয়ে বড় ভরসা ইটভাটাগুলো। এ উপজেলায় ৫১টি ইটভাটা থাকলেও বিভিন্ন কারণে ইতোমধ্যে ৭টি ভাটা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক এসব ভাটায় কাজ করেন, আর প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন আরও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা নির্ভর করে এই শিল্পের ওপর।
তবে ইটভাটার পরিবেশগত ক্ষতির দিক বিবেচনায় শিল্পটিকে নীতিমালার আওতায় এনে টেকসই করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন স্থানীয়রা। তাদের মতে, ফসলি জমির পাশেই ভাটা স্থাপন একদিকে পরিবেশের জন্য হুমকি, অন্যদিকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবিকার উৎস—তাই দুই দিক বিবেচনায় সমাধান প্রয়োজন।
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রামগতিতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে সপ্তাহব্যাপী অভিযান শুরু করে। প্রথম দিন চরআফজাল এলাকায় আমানত, ওহাব ব্রিকস ও জেএস ব্রিকসসহ ৬টি ভাটার চুল্লি, চিমনি ও কাঁচা ইট ধ্বংস করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন র্যাব–১১ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা।
অভিযান চলাকালে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকরা। ইটভাটা বন্ধ হলে বেকারত্বের ভয়াবহতায় পড়তে হবে বলে তারা সড়ক অবরোধ করে দুই ঘণ্টা ধরে অভিযানকারী দলকে আটকে রাখেন। শ্রমিকদের দাবি—এই অঞ্চলে বছরে পাঁচ মাস নদীতে মাছ ধরা নিষেধ। সেই সময় ইটভাটাই তাদের একমাত্র আয়ের পথ। ভাটা বন্ধ হলে পরিবার–পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।
চররমিজ ইউনিয়নের শ্রমিক আবদুল গনি বলেন, “আমরা ৬ মাস নদীতে কাজ করি, বাকি ৬ মাস ভাটায়। ভাটা বন্ধ হলে খাবো কী? সন্তান–পরিবার নিয়ে কোথায় যাব?” ওহাব ব্রিকসের শ্রমিক আব্দুজ জাহের বলেন, “বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তারপর ভাটা বন্ধ করুন। না হলে বাধ্য হয়ে আমরা ভুল পথে চলে যাব—এ দায় নেবে কে?”
সচেতন মহল বলছে, হঠাৎ করে সব ইটভাটা বন্ধ হলে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়বে, যা এলাকায় চুরি, ডাকাতি, মাদকসহ অপরাধ বাড়িয়ে তুলতে পারে। তারা মনে করেন—ইটভাটাকে শিল্প হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে নীতিমালার আওতায় এনে পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালনা করা উচিত।
রামগতি ব্রিকফিল্ড মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. খলিল ও সাধারণ সম্পাদক সানাউল্যাহ বলেন, “আমাদের ভাটাগুলো ঝিগঝাগ প্রযুক্তির—পরিবেশবান্ধব। তবে হঠাৎ করে সব ভাটা বন্ধ করে দিলে বিরূপ প্রভাব পড়বে। পর্যায়ক্রমে বন্ধের সুযোগ দিলে মালিক–শ্রমিক সবাই বিকল্প পথ বের করতে পারবে।”
লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান বলেন, “মানবিক দিক বিবেচনা করতে হয় ঠিকই, কিন্তু সরকারের নির্দেশনাও মানতে হবে। সব দিক মাথায় রেখে অভিযান চলছে।”
রামগতির ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, “ইটভাটায় অসংখ্য শ্রমিক কাজ করে—তাদের বেকারত্ব ও মানবিক অবস্থার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে। কিন্তু সবাইকেই সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।”