
রাজশাহী ব্যুরো:
আবুল হাশেম
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মাটিকাটা গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে এক কৃষক ও তার পরিবারের ওপর একাধিক দফা হামলা, মারধর ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় নারীসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত এক নারী বর্তমানে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক মো. জয়নাল আবেদীন (৪৮), পিতা– মো. আইনাল হক, সাং– মাটিকাটা, থানা– মোহনপুর, জেলা– রাজশাহী অভিযোগ করে জানান, অভিযুক্তরা তারই প্রতিবেশী। দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে জয়নাল আবেদীনের বাড়ির সামনে থাকা একটি বেল গাছ থেকে জোরপূর্বক বেল পাড়তে যান অভিযুক্ত মো. রিফাত (১৯)। এতে বাধা দিলে জয়নাল আবেদীনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় এবং একপর্যায়ে মোছা. রজিনা (৩০) ও মো. রিফাত তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারেন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা জখম হয়। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার কন্যা মোছা. শিরিনা খাতুন নিলা (১৪)-কেও মারধর করে আহত করা হয়।
একই দিন দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে অভিযুক্তরা পুনরায় জয়নাল আবেদীনের বসতবাড়ির সামনে এসে গালিগালাজ শুরু করে। অভিযোগে বলা হয়, এ সময় মো. আব্দুর রশিদ (৬৫) হামলার নির্দেশ দেন। এরপর মো. নওশাদ (৫০) বাঁশের লাঠি দিয়ে জয়নাল আবেদীনকে মারধর করেন। স্বামীকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে তার স্ত্রী মোছা. সাবিনা (৩৫)-কে মো. মুসাদ (৪০) হাতে থাকা হাসুয়া দিয়ে মাথার বাম পাশে কোপ দেন। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। এছাড়া মোছা. শিল্পী (৩০) ও মো. এমরান (২২) বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকে মারধর করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের ভ্যানে করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুতর আহত মোছা. সাবিনাকে ভর্তি করেন এবং জয়নাল আবেদীন ও তার কন্যা শিরিনা খাতুন নিলাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন।
এ ঘটনায় জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে মোহনপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই মামলার কয়েকজন আসামি জামিনে মুক্ত হয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ রাত আনুমানিক ৩টার দিকে সংঘবদ্ধভাবে আবারও জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা এলোপাতাড়ি ঢিল নিক্ষেপ, গালিগালাজ এবং শাবল দিয়ে দরজা-জানালার গ্রিল ভাঙচুরের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে জয়নাল আবেদীন ও তার পরিবারকে বাড়ি ছাড়তে বলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরদিন সকালে তিনি বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদীন জানান, “আমাকে, আমার স্ত্রী ও মেয়েকে গুরুতরভাবে আহত করা হয়েছে। আমার স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দেওয়ায় ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন। পরে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তার মাথার সিটি স্ক্যান করাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। অভিযুক্তরা ঘটনার সাক্ষীদেরও বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।”
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকার সচেতন মহল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুকুল চন্দ্র বলেন, “মামলার পরপরই প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিরা বর্তমানে জামিনে রয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।”