নিজস্ব প্রতিবেদক
শেরপুরের আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল (৭০) জামিনে মুক্তি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের জেলগেট থেকে আটক হয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় সদর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথভাবে তাকে আটক করে। এ ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ১৬ অক্টোবর যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ চন্দন কুমার পালকে আটক করে। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা একাধিক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, ধাপে ধাপে বিভিন্ন মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এসব মামলায় নিম্ন আদালত থেকে জামিন না পেলেও উচ্চ আদালতে আবেদন করলে একে একে সাতটি মামলায় তিনি জামিন পান।
সর্বশেষ একটি মামলায় মঙ্গলবার বিকেলে উচ্চ আদালত থেকে তার জামিনের আদেশ জেলা কারাগারে পৌঁছালে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পান চন্দন পাল। কিন্তু কারাগার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই সদর থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ যৌথভাবে তাকে পুনরায় আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় কারাগার গেটে অপেক্ষমাণ ছিলেন তার অনুজ মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট শক্তিপদ পাল ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
এ বিষয়ে ডিবির পরিদর্শক মো. রেজাউল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, “চন্দন পালকে সদর থানা পুলিশ আটক করেছে। আমরা ডিবি পুলিশ পাশে থেকে সহায়তা করেছি।” তবে কোন মামলার প্রেক্ষিতে তাকে ফের আটক করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতা এ ঘটনার প্রতি গভীর নজর রাখছেন। কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছেন, আবার কেউ বলছেন আইনের প্রক্রিয়াতেই এ ঘটনা ঘটেছে।
চন্দন কুমার পাল শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নন, আইনজীবী সমাজেও পরিচিত মুখ। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তিনি রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন। তার আকস্মিক গ্রেফতার ও বারবার আটক হওয়া স্বজনদের গভীর উদ্বেগে ফেলেছে।
আইনজীবী মহল ও মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, একাধিক মামলায় আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও এভাবে আটক হওয়া একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের দাবি, তারা কেবল আইনের বিধান মেনেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
বর্তমানে চন্দন কুমার পালকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে নতুন করে তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হতে পারে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
শেরপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল বলে মনে করছেন, আবার কেউ এটিকে আইনি প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক ধারা হিসেবে দেখছেন। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন দেখার বিষয়।