মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি :
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী বিটের হালচাটি, মালিটিলা, গজারীচালা, মাগুনঝুড়া, দরবেশতলা ও ৫নম্বর এলাকায় প্রতিরাতে হাজার হাজার টাকার বালু পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিত মাহিন্দ্র গাড়ি ব্যবহার করে বালু পাচার করছে। এ কাজে তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিচ্ছেন গজনী বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজ। ৮–১০ জনের এই চক্র নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে কখনো রাজনৈতিক পরিচয় আবার কখনো প্রভাবশালী নেতাদের নাম ব্যবহার করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল রাতভর মাঠে থেকে বালু পাচার ঠেকাতে অভিযান চালাচ্ছেন। তবে প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীরা শক্ত অবস্থান নিলে কিছু প্রভাবশালী মহলের চাপ ও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে সাংবাদিকদেরও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবাধ বালু পাচার চলতে থাকলে গারো পাহাড় অচিরেই “নেড়া পাহাড়ে” পরিণত হবে। এতে শুধু জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস হবে না, সরকারও হারাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দায়িত্বে থেকেও দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। শুক্র ও শনিবার ছুটি কাটানোর ফাঁকে পাচারকারীরা অবাধে বালু লুটে নিচ্ছে।
শিক্ষানবিশ ফরেস্ট রেঞ্জার তহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি যোগদানের পর থেকেই অল্পসংখ্যক স্টাফ নিয়ে প্রতিনিয়ত পাচারকারীদের ঠেকাচ্ছি। ইতিমধ্যে একটি মাহিন্দ্র জব্দ করে মামলা করেছি। এমনকি জীবনঝুঁকি নিয়েও বালুভর্তি গাড়ি আটকেছি। এরপরও তারা আমাকে টার্গেট করে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু আমি দমে যাব না।”
রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল করিম জানান, গজনীতে নিয়মিত বালু পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যা প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “গত কয়েক মাসে একাধিক গাড়ি জব্দ করেছি, পাচারকারীদের কারাদণ্ড ও জরিমানা দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও কঠোর হবো। পাহাড় ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী বালুখেকোদের কোনো ছাড় নেই। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসন শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, প্রশাসন ও গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না, কারণ বিট কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। তাই তাঁকে দ্রুত বদলি করতে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা।