মনজু হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার:
পঞ্চগড় জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দাবি করেছেন, তিনি আসমানে গিয়ে আল্লাহর দিদার পেয়েছেন, হুরদের সঙ্গে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা করেছেন এবং নবী মোহাম্মদ (সা.) স্বয়ং তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া তিনি জানিয়েছেন, আল্লাহ তাকে আগাম জান্নাতের আশ্বাস দিয়েছেন।
সোমবার প্রকাশিত ভিডিওতে উপপরিচালক ফেরেস্তা, হুর ও নবী (সা.)-র সঙ্গে সাক্ষাতের বর্ণনা দেন। ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। ইসলামী সংগঠন ও সাধারণ মুসল্লিরা ভিডিওটি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেছেন, কেউ আবার গ্রেপ্তার করার দাবি তুলেছেন।
পঞ্চগড়ের তরুণ সমাজকর্মী মানিক উদ্দীন বলেন, “সে একজন মানসিক রোগী। তার স্থান পঞ্চগড়ে নয়। তাকে পাবনাতে পাঠানো উচিত।”
ডা. রেজওয়ান রেজা মন্তব্য করেছেন, “হয় সে ভন্ড প্রতারক, নয়তো চরম বিকারগ্রস্ত মানসিক রোগী। আল্লাহ মানুষকে এমন প্রতারক থেকে হেফাজত করুন।”
নুরে মদিনা ক্বেরাতুল কুরআন মডেল মাদরাসার শিক্ষক এইচ এম লিয়াকত আলী বলেন, “মুসা (আ.) আল্লাহর নূর দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। আর এই কর্মকর্তা বলছেন, তিনি আল্লাহ ও নবী (সা.) দেখেছেন। এটি বড় মিথ্যাচার এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি আমাদের।”
একেএম ওয়াহিদুজ্জামান ২০২০ সালে রাজশাহী থেকে বোদা উপজেলায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। পরে শাস্তিমূলক বদলি হয়ে পঞ্চগড়ে এসে একই গল্প বলে চলেছেন। তিনি দেবীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক (অ.দা.) হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
পঞ্চগড় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি আল্লাহ ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে দেখেছি। আল্লাহ আমাকে বলেছেন, তুই এতো চিন্তা করিস কেন? আমি তোর পাশে আছি। এক রমজান মাসে আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে নবী (সা.) এসে আমাকে সালাম দিয়েছেন। আমি আবেগে কেঁদে ফেলেছিলাম। আসমান থেকে ইশারা আসায় আমি দাঁড়ি রেখেছি।”
পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফায়েল প্রধান এবং কারাতে প্রশিক্ষক সোয়েব আলী সবুজও জানিয়েছেন, তারা ব্যক্তিগতভাবে ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে একই ধরনের বর্ণনা শুনেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পঞ্চগড়ে সাধারণ মুসল্লি ও ইসলামী সংগঠনগুলোর মধ্যে উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই উপপরিচালকের বক্তব্যকে মানসিক ভারসাম্যহীন বা ধর্মীয় ভুল ধারণা ছড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছেন এবং কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
উল্লেখযোগ্য, ভিডিওটি পঞ্চগড় জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সামাজিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। মুসল্লি ও ধর্মীয় নেতারা এ ধরনের বক্তব্যকে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হিসেবে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।