মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশে ৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে পুশইন করার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের (৩৯ বিজিবি) অধীনস্থ তেলিখালী বিওপির দায়িত্বপূর্ণ রঙ্গনপাড়া সীমান্তের ১১১৯/এমপি পিলার দিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ভারতের ২২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের যাত্রাকোনা ক্যাম্পের সদস্যরা ১ জন পুরুষ, ২ জন নারী এবং ৩ জন শিশুসহ মোট ৬ জন রোহিঙ্গাকে সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়ে দেয়। খবর পেয়ে বিজিবি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তাদের আটক করে। বর্তমানে তারা হালুয়াঘাট থানার পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক রোহিঙ্গারা জানায়, তারা সকলেই পূর্বে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিবন্ধিতভাবে বসবাস করত। পরবর্তীতে জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করে ইটভাটা, কৃষিকাজ ও গৃহস্থালির শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। সম্প্রতি ভারতে রোহিঙ্গা ও অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক ধরপাকড় অভিযানে তারা আটক হয়। এরপর বিএসএফ সদস্যরা তাদের বাংলাদেশ সীমান্তে এনে পুশইন করে দেয়।
এ বিষয়ে উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশের সহায়তায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের পুনরায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয় বলে জানা গেছে।
ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বলেন, “ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে দায়িত্ব পালন করছে। সীমান্তে যেকোনো প্রকার অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান বা অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আমাদের সদস্যরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা টহলে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, পুশইনকৃত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ অনুপ্রবেশের ঝুঁকিতে রয়েছে। সীমান্তের অনেক স্থানে পাহাড়ি পথ ও ছোট নদী থাকায় অনুপ্রবেশকারীরা সহজেই বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। বিজিবি নিয়মিত টহল ও নজরদারি জোরদার করলেও মাঝে মধ্যে এমন ঘটনা ঘটছে।
এই ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও বাড়িয়েছে এবং সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর জনপ্রতিনিধিদের সন্দেহজনক কোনো চলাফেরা বা নতুন ব্যক্তির অবস্থান দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।