শাহিন হাওলাদার / বরিশাল প্রতিনিধি/
বরিশালের বাকেরগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ প্রচারে পথসভা ও গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত হয়ে ওঠে উপজেলা সদর কালিগঞ্জ বাজার এলাকা।
বুধবার (২৭ আগস্ট) রাত ৮টায় এ পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন। উপজেলা বিএনপির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল মালেক শিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান মোল্লা।
পথসভায় বক্তৃতা দেন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন, বিএনপি নেতা খোকন জোমাদ্দার, হারুন মাঝি, আনোয়ার হোসেন, মাসুদ জোমাদ্দার, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মনির, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব কবির খানসহ বিভিন্ন স্তরের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন বলেন,
“বাকেরগঞ্জ বিএনপিতে গণতন্ত্র নেই। এখানে চলছে আবুলীয় পকেট কমিটি।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে যাদের ছবি থাকবে কিংবা ঘনিষ্ঠতা থাকবে, তাদের দলে কোনোভাবেই স্থান দেওয়া যাবে না। অথচ উপজেলা ও পৌর বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে ত্যাগী, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে আসা হাইব্রিড ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ্যাডভোকেট রাজন আরও বলেন,
“শোনা যাচ্ছে, হাই-এক্স গাড়ি ও নগদ অর্থের বিনিময়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিতর্কিতদের বসানো হয়েছে। এ ধরনের অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দলকে দুর্বল করে দিচ্ছে।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, খুব শিগগিরই এসব পকেট কমিটির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। উপজেলা ও পৌর বিএনপির বিদ্যমান কমিটি বাতিল করে যোগ্য, ত্যাগী ও আন্দোলন-সংগ্রামে পরীক্ষিত নেতাদের যথাযথ স্থান নিশ্চিত করা হবে।
সভায় বক্তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি’ জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, এই ৩১ দফা হলো দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার।
বক্তারা উল্লেখ করেন, জনগণ আজ পরিবর্তন চায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, গণতন্ত্র হরণ এবং সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা শেষ হয়ে গেছে। তাই বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি জনগণের মুক্তির রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে।
পথসভায় অংশগ্রহণকারী তৃণমূল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটি জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে না। অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে বাদ দিয়ে বিতর্কিত এবং সুবিধাভোগীদের দলে স্থান দেওয়ায় দলের ভেতরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
অনেকেই মনে করেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ ধরনের অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিএনপির আন্দোলনকে দুর্বল করে দেবে। তারা এ্যাডভোকেট রাজনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সময় এসেছে ত্যাগী কর্মীদের পুনরায় সংগঠিত করে নতুন উদ্যমে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার।
শুধু নেতাকর্মীরাই নয়, পথসভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে ভিড় করেন। বক্তাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন তারা। অনেকেই বলেন, বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে দেশে সুশাসন ও জনকল্যাণ প্রতিষ্ঠা পাবে।
এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজনের বক্তব্য স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে “পকেট কমিটি” প্রসঙ্গ রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষ আরও প্রকট আকারে প্রকাশ পেল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভেতরকার বিভাজন কমানো এবং তৃণমূলকে সংগঠিত করা দলটির জন্য জরুরি। না হলে আন্দোলন ও নির্বাচনী লড়াই দুই ক্ষেত্রেই দল পিছিয়ে পড়তে পারে।
পথসভা শেষে নেতাকর্মীরা কালিগঞ্জ বাজারের আশেপাশে গণসংযোগ চালান। তারা দোকানপাট ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে দলের ৩১ দফা কর্মসূচির প্রচার করেন।
সামগ্রিকভাবে এ পথসভা বাকেরগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করেছে। এ্যাডভোকেট রাজনের বক্তব্যের পর দলীয় অভ্যন্তরে পরিবর্তনের দাবি আরও জোরালো হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক মহল।