মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তিন তরুণ-তরুণী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তাদের সাহসী চিন্তাধারা, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় আগ্রহ এবং নেতৃত্বের যোগ্যতার কারণে তারা ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসে প্রশংসিত হচ্ছেন।
ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের শালচূড়া গ্রামের সন্তান আহমেদ হোসেন জনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র। শেরপুর জেলা ছাত্র সংসদের সভাপতি এই শিক্ষার্থী ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়ছেন। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাবান্ধব আন্দোলন এবং ছাত্রকল্যাণে সক্রিয় ভূমিকার কারণে তিনি একজন আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্বশীল প্রার্থী হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।
আহমেদ হোসেন জনি জানান, “আমার মূল লক্ষ্য হল ঢাবিতে দখলদারিত্বমুক্ত হল, এক শিক্ষার্থী এক সিট ব্যবস্থা, ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত খাবার, সুষ্ঠু পড়াশোনার পরিবেশ এবং আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের অধিকার সহজে পেতে পারেন, সেই জন্যই আমি প্রার্থী হয়েছি।”
উপজেলার সদর এলাকার ছেলে নাহিদ হাসান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক ছাত্র। নাহিদ ডাকসুর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর সরল ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা, সংগঠনিক দক্ষতা এবং ন্যায়ের পক্ষে অবিচল অবস্থান ইতোমধ্যেই ছাত্রসমাজে আশার আলো জাগিয়েছে। নাহিদ বলেন, “আমি চাই ছাত্রসমাজের মৌলিক অধিকার ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করা হোক। নির্বাচন শুধুমাত্র দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নয়, বরং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া তুলে ধরার জন্য।”
ঝিনাইগাতী সদরের মেয়ে আরাফাত আক্তার তামান্না ডাকসুর রোকেয়া হল পাঠকক্ষ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের ছাত্রী এবং রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থী আন্দোলনে সরব ছিলেন তামান্না। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, নেই এবং হবও না। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া তুলে ধরার জন্যই আমি প্রার্থী হয়েছি। আমি চাই, এক শিক্ষার্থী এক সিট, সুষ্ঠু শিক্ষা পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ হোক।”
এই তিন প্রার্থীই শিক্ষার্থী নেতৃত্বে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। মফস্বল থেকে উঠে এসে তারা প্রমাণ করছেন যে, দূরবর্তী উপজেলা থেকেও নেতৃত্বের যোগ্যতা, সততা এবং মেধার মাধ্যমে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়া সম্ভব।
স্থানীয় রাজনৈতিক এবং শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, ভারত সীমান্ত ঘেঁষা প্রান্তিক উপজেলার এই তিন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ শুধু ব্যক্তিগত গৌরব নয়, বরং এলাকার জন্যও এক বিশেষ সম্মান। ঝিনাইগাতীর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রবেতা ম্রং বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে আমাদের তিন মেধাবী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ সত্যিই গর্বের বিষয়। তারা জয়ী হলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব নয়, ভবিষ্যতে দেশেরও নেতৃত্বে অবদান রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।”
শেরপুর জেলার শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এই ধরনের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ডাকসুতে নতুন সংস্কৃতি ও উদ্ভাবনী নেতৃত্ব নিয়ে আসবেন। ক্যাম্পাসে স্বচ্ছ নির্বাচন, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান এবং ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ছাত্রসমাজের অভিজ্ঞ নেতারা মনে করছেন, মফস্বল থেকে উঠে আসা এই প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন আশা। তাদের নেতৃত্ব গুণ, যোগ্যতা এবং আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার কেবল নির্বাচনে নয়, বরং ভবিষ্যতে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।
ঝিনাইগাতী থেকে আসা এই তিন তরুণ-তরুণী শিক্ষার্থীর চরিত্র, সততা এবং সাহসিকতা ডাকসুর নির্বাচনে ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হচ্ছে। তারা প্রমাণ করেছেন যে, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান, অধিকার আদায় এবং নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে মফস্বল থেকেও দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখা সম্ভব।
এছাড়া, স্থানীয়রা আশাবাদী যে, নির্বাচনে জয়ী হলে এই তিন প্রার্থী শিক্ষার্থীদের বাস্তব চাহিদা পূরণে, মানসম্মত শিক্ষা, সুষ্ঠু আবাসিক ব্যবস্থা এবং ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ঝিনাইগাতীর এই তিন প্রার্থী শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা ও সমস্যা সমাধানে সামাজিক সচেতনতার সঙ্গেও যুক্ত। তাঁরা শুধুমাত্র নির্বাচনী লড়াই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির বিষয়টি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তুলে ধরার জন্যও প্রস্তুত।
ক্যাম্পাস পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই তিন প্রার্থী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছেন। তাদের স্বতন্ত্রভাবে লড়াই করা এবং মফস্বল অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করা শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন উদাহরণ স্থাপন করেছে।
নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন শিক্ষার্থীরা দেখছেন, মফস্বল থেকে উঠে আসা এই প্রার্থীরা ছাত্রসমাজের অধিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলছেন।
শেষ করে বলা যায়, ঝিনাইগাতীর এই তিন তরুণ-তরুণী প্রমাণ করেছেন যে, প্রান্তিক উপজেলা থেকেও মেধা, সততা এবং নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে প্রতিভা তুলে ধরা সম্ভব। তাদের পথচলায় এখন এলাকার মানুষের একটাই প্রত্যাশা, জয়ী হয়ে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীর অধিকার ও স্বপ্ন পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।