মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি :
শেরপুরের সদর উপজেলায় শাপলা ফুল তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার গাজিরখামার চকপাড়া এলাকার বলেশ্বর বিল থেকে তাদের নিথর দেহ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। নিহত দুই শিশু হলো—চকপাড়া গ্রামের মাসেক আলীর মেয়ে ফাহিমা আক্তার নুন (৯) এবং একই গ্রামের জয়নুদ্দিনের মেয়ে জেমি (৮)।
স্থানীয়রা জানান, সকালে দুই বান্ধবী ফাহিমা ও জেমি প্রতিবেশী অন্যান্য শিশুদের মতো শাপলা ফুল তুলতে বাড়ির পাশের বলেশ্বর বিলে যায়। প্রতিদিনের মতো তারা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বিলের পানিতে নেমে শাপলা তুলছিল। তবে দুপুর গড়ালেও তারা বাড়িতে ফেরেনি। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। দীর্ঘসময় খোঁজাখুঁজির পর পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় বিলে নেমে অনেকটা সময় চেষ্টার পর বিলের মাঝখান থেকে তাদের মরদেহ ভেসে ওঠে।
স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধারণা করা হচ্ছে শাপলা তুলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত বিলের গভীর পানিতে পড়ে যায় তারা। বিলের পানি তুলনামূলক গভীর হওয়ায় সাঁতার না জানায় তারা ডুবে মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনা জানাজানি হলে পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। দুই শিশুর মৃত্যুতে পরিবারে শুরু হয়েছে আহাজারি ও মাতম।
শিশুদের অকাল মৃত্যুতে গ্রামের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্কুলপড়ুয়া এ দুই কিশোরীর প্রাণহীন দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। গ্রামের মানুষ জানান, প্রতিদিনই অনেক শিশু শাপলা তুলতে বিলে যায়, তবে এভাবে দুর্ঘটনা ঘটবে তা কেউ ভাবেনি। স্থানীয়দের দাবি, এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে শিশুদের বিল বা গভীর পানিতে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে এবং অভিভাবকদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “শিশুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে শিশুদের অকারণে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় যেতে না দেওয়া হয়।”
এদিকে দুই শিশুর অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের আবহ বিরাজ করছে। তাদের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শুধু পরিবার নয়, প্রতিবেশী, স্কুলের সহপাঠী এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও শোকাহত। শুক্রবার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে দুই শিশুকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।