নীলফামারী প্রতিনিধি:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণত ছুটির ঘণ্টা বাজলেই শিশুরা উল্লাসে মেতে ওঠে, দৌড় দেয় বাড়ির পথে। কিন্তু নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছচাপানী ইউনিয়নের ভাসানী পাড়া পূর্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দৃশ্যটা একেবারেই ভিন্ন। ছুটি হলেও শিক্ষার্থীদের মুখ ভার হয়ে যায়। সকাল থেকে যে আনন্দঘন পরিবেশ তাদের টেনে এনেছে, তা ছেড়ে যাওয়া সহজ হয় না তাদের জন্য।
ডিমলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে তিস্তার তীরবর্তী বন্যাকবলিত দারিদ্র্যপীড়িত গ্রাম ভাসানী পাড়ায় অবস্থিত বিদ্যালয়টি এখন শিক্ষানুরাগীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। কৃষিজীবী ও দিনমজুর পরিবারের সন্তানদের জন্য বিদ্যালয়টি হয়ে উঠেছে এক আলোকবর্তিকা।
৩১ আগস্ট (রবিবার) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় চত্বর সাদামাটা হলেও পরিবেশ মনোরম ও আকর্ষণীয়। মাঠে শিশুরা খেলায় মেতে আছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো শ্রেণিকক্ষ, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান চলছে। শিক্ষার্থীদের আনন্দমুখর রাখতে রয়েছে বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী, শুদ্ধাচার সততা স্টোর, মানবতার দেয়ালসহ নানা উদ্যোগ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলার রহমান জানান, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের পরিবেশে এতটাই মগ্ন হয়ে যায় যে, ছুটির পরেও বাড়ি যেতে চায় না। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছি। শিক্ষা শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমেও তাদের আগ্রহ বাড়ানো হচ্ছে।”
সহকারী শিক্ষক ওমর ফারুক জানান, তারা বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে পাঠদান করেন, ফলে শিক্ষার্থীরা আনন্দ পায় ও মনোযোগী হয়।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আরিফা জানায়, “স্যাররা খুব সুন্দর করে পড়ান। কিছু না বুঝলে বারবার বুঝিয়ে দেন। তাই পড়াশোনায় আমাদের আগ্রহ বেড়েছে।”
স্থানীয় সমাজসেবক এনামুল হক বলেন, আগে এই এলাকায় অভাব-অনটনের কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম ছিল। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর সুফল আজ এলাকাবাসী পাচ্ছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১০০ জন শিক্ষার্থী ও পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষক-অভিভাবক ও স্থানীয়দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভাসানী পাড়া পূর্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ শিক্ষাবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকরা আশা করছেন, অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যালয়টি উপজেলার অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।