টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের খ্যাতনামা রাজনৈতিক নেতা ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের বাসভবনে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার পর শহরের কাজী নজরুল সড়কে অবস্থিত ‘সোনারবাংলা’ নামের ওই বাসভবনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
বাড়ির কর্মচারী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, রাতের অন্ধকারে একদল দুর্বৃত্ত বাসভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বাসার জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। পরবর্তীতে তারা মই ব্যবহার করে মূল ফটক টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকে দুর্বৃত্তরা কাদের সিদ্দিকীর ব্যবহৃত দুটি ব্যক্তিগত গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় আশপাশের এলাকাবাসী চিৎকার শুনে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) রাজু মিয়া বলেন, “হামলার সময় স্যার (কাদের সিদ্দিকী) দ্বিতীয় তলার কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ জানালার কাঁচ ভাঙার শব্দে আমি বাইরে আসি। দেখি প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন দুর্বৃত্ত বাসার ভেতরে প্রবেশ করেছে। তারা দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে দ্রুত পালিয়ে যায়।”
এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ধারণা করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা হতে পারে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষ দায় স্বীকার করেনি।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। টাঙ্গাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভির আহমেদ বলেন, “হামলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের কাজ। আমরা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছি এবং খুব শিগগিরই হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
এদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কাদের সিদ্দিকী দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের বাইরে থেকে নিজস্ব রাজনৈতিক দল পরিচালনা করে আসছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে অতীতে বিভিন্ন সময়ে নানা চাপে পড়তে হয়েছে বলেও জানা গেছে। তাই বাসভবনে এ হামলার ঘটনায় অনেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সম্ভাবনার দিকটি উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
তবে এখনো পর্যন্ত কাদের সিদ্দিকী কিংবা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি আপাতত নিরাপদে আছেন এবং পুলিশি তদন্তের ওপর আস্থা রাখছেন।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
টাঙ্গাইল শহরের হৃদয়ঙ্গম স্থানে অবস্থিত ‘সোনারবাংলা’ বাসভবনটি দীর্ঘদিন ধরেই কাদের সিদ্দিকীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। তাই এখানে এ ধরনের হামলার ঘটনায় জনমনে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।