(নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সীমান্তবর্তী উপজেলা ডিমলায় একসময় ফুটবল ছিল শিশু-কিশোরদের প্রিয় খেলা। বিকেলের আড্ডা জমত স্কুল মাঠে, গ্রামের খোলা জায়গায় কিংবা পাড়ার ময়দানে। খেলার উল্লাসে মুখর থাকত চারদিক। কিন্তু কালের আবর্তে সেই দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। দখল, স্থাপনা নির্মাণ, অবহেলা আর উদাসীনতায় একে একে হারিয়ে যাচ্ছে মাঠগুলো।
সরকারি হিসাবে উপজেলায় বড় খেলার মাঠ আছে মাত্র একটি, যা জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে শিশু-কিশোররা আর খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঠ না থাকায় তরুণরা এখন মোবাইল গেমস, অনলাইন জুয়া, টিকটক ও মাদকের মতো আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে।
ক্রীড়া সংগঠক রাশেদ খান বলেন, “ফুটবল তরুণদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে, প্রতিভা বিকশিত করে। মাঠ হারিয়ে যাওয়ায় তারা এখন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।”
তরুণ ফুটবলার রুবেল হোসেন জানান, “ছোটবেলায় জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু মাঠ নেই, প্রশিক্ষণ নেই—তাই ফুটবল ছেড়ে দিতে হচ্ছে।”
স্থানীয় ফুটবলপ্রেমী সামিউল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, “ডিমলার মাঠগুলো যদি ঠিক থাকত, অনেক তরুণ জাতীয় পর্যায়ে খেলতে পারত। কিন্তু প্রতিভা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
অভিভাবকরা বলছেন, সন্তানদের মাঠে নেওয়ার মতো জায়গা না থাকায় তারা সারাদিন মোবাইলে সময় কাটায়, এতে পড়াশোনা ও চরিত্র দুইই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান জানান, তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য মাঠ অপরিহার্য। ইতিমধ্যে মাঠ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে ক্রীড়া কার্যক্রম সক্রিয় করার পরিকল্পনাও রয়েছে। তিনি বলেন, “খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের মাদক ও অপরাধ থেকে দূরে রাখা সম্ভব। প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে। নিয়মিত টুর্নামেন্ট আয়োজন, মাঠ সংস্কার ও ক্রীড়া একাডেমি স্থাপন করা গেলে ডিমলা আবার ফুটবলের প্রাণ ফিরিয়ে পাবে।
একসময় গোলের উল্লাসে যেসব মাঠ কেঁপে উঠত, সেখানে আজ নীরবতা। তবে সবাই আশাবাদী, সময়মতো উদ্যোগ নিলে ডিমলার হারানো গৌরব ফিরবে, ফুটবল আবার প্রাণ ফিরে পাবে।