ফিরোজ শাহ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে গৃহবধূ এতিম সুমাইয়া হত্যা ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইসলামপুর-দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়কের মোশারফগঞ্জ বাজার এলাকায় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নিহত সুমাইয়ার মা নিলুফা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন, “আমার মেয়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিভিন্ন সময় নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হলেও পুলিশ অভিযুক্তদের ছেড়ে দিয়েছে।
মানববন্ধনে নিহতের স্বজন উজ্জ্বল, জাকির হোসেন, শওকতসহ এলাকার সাধারণ মানুষও একই অভিযোগ করেন। তারা বলেন, সুমাইয়ার মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করছে। তারা দ্রুত মামলা গ্রহণ, ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা ও প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বীর উৎমারচর গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে সুমাইয়ার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন শুক্রবার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত সুমাইয়া ইসলামপুর উপজেলার মোশারফগঞ্জ তেঘুরিয়া গ্রামের মৃত শহিদের মেয়ে। এতিম এই তরুণী প্রায় আট মাস আগে পার্শ্ববর্তী দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বীর উৎমারচর গ্রামের সোনাজ উদ্দিনের ছেলে সুমন (২২)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে বিয়ের পর থেকেই তাকে নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের।
ঘটনার দিন পুলিশ সুমাইয়ার স্বামী সুমন, শ্বশুর সোনাজ উদ্দিন ও শাশুড়ি খালেদাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়, যা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হাসান জানান, “ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রতিবেদনের মাধ্যমেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, এ ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত অত্যন্ত জরুরি। তারা দাবি জানান, কোনো প্রকার প্রভাব খাটিয়ে যেন বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত বা ভিন্নখাতে প্রবাহিত না হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা একবাক্যে বলেন, এতিম সুমাইয়ার মৃত্যু যদি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, তবে এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এলাকায় বড় ধরনের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জের সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সবাই আশা করছেন, প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালিয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবে এবং এতিম সুমাইয়ার মৃত্যুর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।