মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি :
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুর জেলার ভোগাই, চেল্লাখালী, মহারশি ও সোমেশ্বরীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যায়। এতে মহারশি নদীর রামেরকুড়া ও খৈলকুড়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিজমি, বসতবাড়ি, স্থানীয় বাজার ও মাছের প্রকল্পগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাঁধ ভাঙার ফলে সদর উপজেলার রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, গোরধবা, চরখৈলকুড়া, ভোগাইপাড়াসহ অন্তত ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। বন্যার পানিতে সদর বাজারের প্রধান সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাজারের দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে কৃষকেরা জানান, আমন ধানের জমি, সবজি ক্ষেত এবং বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বহু মাছের ঘের ও প্রকল্প পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত পড়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য জরুরি ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয়দের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে শেরপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক রুবেলসহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, বাঁধের দুর্বলতা আগেই মেরামত করা হলে এ ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হতো। তারা দ্রুত বাঁধ সংস্কার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
হঠাৎ এই বন্যা ও পানিবন্দি পরিস্থিতির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
সব মিলিয়ে শেরপুরের মহারশি নদীর বাঁধ ভাঙনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে জেলার আরও বিস্তীর্ণ এলাকা পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শেরপুরে মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত