মশিয়ার রহমান, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
বাংলার প্রকৃতিতে শরৎকাল মানেই শুভ্র কাশফুলের দোল খাওয়ার দৃশ্য। নদীর তীর, পতিত জমি কিংবা গ্রামের ঝোপঝাড়—সব জায়গাতেই কাশফুলের স্নিগ্ধতায় ভরে উঠত গ্রামবাংলা। কিন্তু নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন প্রায় বিরল।
এক সময় শরৎ এলেই তিস্তার পাড়ে কিংবা চরাঞ্চলে বিস্তীর্ণ কাশবন দর্শনার্থীদের বিমোহিত করত। বিশেষ করে জলঢাকার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের বুড়িতিস্তা নদীর পাড়, ভাবনচুর চর ও ডাউয়াবাড়ী এলাকায় কাশফুলের অপরূপ দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে এসব স্থানে অল্প কিছু কাশফুল থাকলেও তা বিচ্ছিন্ন ও সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। একই অবস্থা জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও।
স্থানীয়রা জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমি সম্প্রসারণ, বসতি বিস্তার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে নদীর তীর ও পতিত জমি কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবনসহ প্রাকৃতিক অনেক ঐতিহ্য। ফলে গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অংশ কাশফুল আজ বিলুপ্তির পথে।
প্রকৃতিপ্রেমীদের মতে, সামান্য সচেতনতা ও সংরক্ষণ উদ্যোগ নিলে কাশবনকে রক্ষা করা সম্ভব। শুধু কাশফুলই নয়, এভাবে টিকে যাবে গ্রামবাংলার অন্যান্য প্রাকৃতিক ঐতিহ্যও।
ভাবনচুর চর গ্রামের কবির হোসেন বলেন, “আগে বর্ষা-শরৎ এলে তিস্তার পাড়জুড়ে কাশফুলে ভরে যেত। এখন সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না।”
মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর কবির জানান, কাশ দিয়ে আগে গ্রামের গৃহস্থরা ঝাঁটা, ঝুড়ি, এমনকি ঘরের ছাউনি পর্যন্ত বানাতেন। এখন কাশফুল না থাকায় সেই গ্রামীণ জীবনযাত্রার ঐতিহ্যও হারিয়ে যাচ্ছে।
কাশবন মূলত গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস, যা ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর চিরল পাতা ধারালো এবং নদীর ধারে কিংবা চরাঞ্চলে বেশি জন্মে। অথচ প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণে আজ গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা এই সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে নীরবে।