শরিফা বেগম শিউলী | স্টাফ রিপোর্টার
রংপুরের গঙ্গাচড়া সাব-রেজিস্ট্রার রিপন চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে কমিশন ছাড়া দলিলে সই না করার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ঘুষ গ্রহণ এবং সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জনের অভিযোগ করেছেন দলিল লেখক ও স্থানীয়রা।
অভিযোগ রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া রিপন আওয়ামী লীগের ক্যাডার ও বিতর্কিত সংগঠন ইসকনের অর্থদাতা। এমনকি বিএনপি নেতা হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিও তিনি। ঘুষ লেনদেনের ভিডিও প্রকাশ পেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় দলিল লেখক সমিতি জানায়, রেজিস্ট্রি অফিসে রিপন একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। প্রতিটি দলিলে সরকারি ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত কমিশন আদায় করেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০টি দলিল সম্পাদিত হয়, যার মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঘুষ সংগ্রহ করা হয়।
এক দলিল লেখক বলেন, “কম টাকায় গেলে কাগজে সমস্যা দেখান, বেশি দিলে সব ঠিক হয়ে যায়।”
এমনকি ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মোহরার মশিউর রহমান সাব-রেজিস্ট্রার রিপনকে টাকা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বিষয়টি প্রকাশের পরও কোনো তদন্ত হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক জানান, রিপন রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে দলিল লেখকদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেন।
সূত্র জানায়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জে দায়িত্ব পালনের সময়ও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তখন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। রিপন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলের ভাগনে হওয়ায় তখনও রক্ষা পান।
এদিকে, বিএনপি নেতা লিয়াকত উল্লাহ লুসানের ওপর হামলার ঘটনায় রিপনসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগের মিছিলে যোগ দিয়ে হামলায় অংশ নিয়েছিলেন।
স্থানীয়রা বলেন, “একজন হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি কীভাবে সরকারি পদে বহাল থাকতে পারেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ।”
জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, “সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়মের বিষয়ে আমরাও শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”