
১১ ডিসেম্বর ২০২৫, বুধবার সকালে পরিবেশ সুরক্ষা ও আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে শেরপুর জেলা প্রশাসন একটি সমন্বিত অভিযানে নামেন। সকাল ১১টা থেকে শেরপুর সদর ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন। অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটার কারণে পরিবেশগত ঝুঁকি বৃদ্ধি, কৃষি জমির ক্ষতি এবং বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ বাড়ছিল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই জেলা প্রশাসন এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান চলাকালে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর বিভিন্ন ধারায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। পরিদর্শনে দেখা যায়, তিনটি ইটভাটা প্রয়োজনীয় লাইসেন্স, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও নির্ধারিত মানদণ্ড ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হচ্ছিল। পাশাপাশি ইট পোড়ানোর প্রক্রিয়ায় কাঠ ও অননুমোদিত জ্বালানি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব আইন লঙ্ঘনের দায়ে তিনটি ইটভাটাকে মোট ৯,০০,০০০ (নয় লাখ) টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় অভিযানের সময় অবৈধ ইটভাটাগুলোর কাঁচা ইট ভাঙচুর করে বিনষ্ট করা হয়। একইসঙ্গে ভাটাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়, যাতে কোনোভাবেই পুনরায় অবৈধভাবে কার্যক্রম চালু করতে না পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে ভাটা চালাতে হবে—অন্যথায় শাস্তি অব্যাহত থাকবে। অভিযানে অংশ নেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জানান, সরকারের আইন অমান্য করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসন আরও জানায়, এ ধরনের অবৈধ ইটভাটা শুধু পরিবেশ নয়, স্থানীয় জনগণের জীবিকা, কৃষিজমি, নদীনালা ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ধোঁয়ার কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই জনস্বার্থ রক্ষায় এসব ভাটার বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে। অভিযানের মাধ্যমে অন্য অবৈধ ভাটা মালিকদেরও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে যে, আইন না মেনে কোনোভাবেই ইট উৎপাদন চালানো যাবে না।
শেরপুর জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও নিয়মিতভাবে এ ধরনের অভিযান পরিচালিত হবে। পরিবেশ রক্ষা ও সুশাসন নিশ্চিতে তারা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনে আরও কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অভিযানের সার্বিক তথ্য গণমাধ্যমে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মিডিয়া সেল সংবাদটি প্রচার করে।