বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি:
জামালপুরের বকশীগঞ্জে উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার (আলো) ছয়তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ঘটনার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)-এ ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্রীর পরিবার ও সহপাঠীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ ও প্রকাশ্যে অপমানই সাথীকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে। ঘটনার ছয় দিন পার হলেও সাথী এখনও কথা বলতে পারছে না।
ভুক্তভোগী সাথীর চাচা মুরাদ হোসেন বকশীগঞ্জ থানায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তিন মাস আগে একটি কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে কয়েকজন ছাত্রী মসজিদে ঘুরতে গেলে সেখানে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হয়। তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে জানানো হলে তখন বিষয়টি হালকাভাবে দেখা হয়। কিন্তু গত ১ জুলাই নূর মোহাম্মদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সাথীকে নিয়ে বাড়তে থাকে মানসিক চাপ।
সাথীর সহপাঠী ও শিক্ষকদের ভাষ্যমতে, ঘটনার দিন প্রধান শিক্ষক সবার সামনে সাথীকে অপমান করে এবং অভিভাবক না আনলে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। কিছু সময় পরই সাথী নিজ হাতে আঘাত করে এবং পরে ছয়তলা ভবন থেকে লাফ দেয়।
সাথীর বড় বোন আশরাফুন নাহার আখি বলেন, “একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীকে দিনের পর দিন মানসিক চাপ দিয়ে এমন কাণ্ড ঘটানো উচিত হয়নি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বলেন, “আমি কেবল অভিভাবক ডাকার কথা বলেছিলাম। এরপরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে।”
এ প্রসঙ্গে বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহাম্মেদ জানান, “তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, “ঘটনা দুঃখজনক। তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও শিক্ষকদের আচরণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সাথী আক্তারের সুস্থতা এবং ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা নিয়ে পরিবার, সহপাঠী ও এলাকাবাসী অধীর অপেক্ষায়।