1. live@www.newsgrambangla.com : www.fnnews24.com www.fnnews24.com : www.fnnews24.com www.fnnews24.com
  2. info@www.newsgrambangla.com : নিউজ গ্রামবাংলা :
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ঝিনাইগাতীতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতন মামলায় সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন কারাগারে ডিমলায় তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের মতবিনিময় সভা কেন্দুয়ায় সিএনজি চালক নূর জামান হত্যা মামলায় আরো ২ আসামী গ্রেফতার নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দাবিতে শেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল বকশীগঞ্জে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে নবাগত ইউএনওর পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নোয়াখালীতে সরকারি চাল বিক্রির অভিযোগে বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার রাণীনগরে বিলে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে নৌকা ডুবি, জেলে নিহত শ্রীবরদীতে বিজিবির অভিযানে ২৪ লাখ টাকার ভারতীয় চোরাচালানী মালামাল জব্দ উত্তরা ইপিজেডে রণক্ষেত্র: শ্রমিক নিহত, আহত অন্তত ৩০

শরবত বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন কাওছার মিয়া, দুই দশকের সংগ্রামে এক প্রেরণার গল্প

প্রতিনিধির নাম :
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে
শরবতের বালতি কাঁধে নিয়ে হেঁটে চলেছেন শরবতওয়ালা কাওছার মিয়া
সংগ্রামী কাওছার মিয়া—প্রতিদিন শরবত বিক্রি করে ছয় সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন, দুই দশকের এই পথচলায় তিনি হয়েছেন প্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ফরিদ মিয়া, নান্দাইল (ময়মনসিংহ)ঃ
জীবন মানেই সংগ্রাম—এ কথার বাস্তব উদাহরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাওছার মিয়া। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি হেঁটে হেঁটে শরবত বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় কিংবা শীত—কোনো কিছুই থামাতে পারেনি তাঁর পথচলা। কারণ তাঁর কাঁধে শুধু নিজের নয়, ছয় সদস্যের পুরো পরিবারের দায়িত্ব।

স্ত্রী ও দুই ছেলে, এক মেয়ের স্বপ্ন পূরণে প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় কাওছার মিয়ার পরিশ্রমের গল্প। ঘরে শরবত প্রস্তুত করে ভারী বালতি কাঁধে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন পথে। প্রতিটি গ্লাস শরবত তাঁর কাছে কেবল পানীয় নয়, বরং সংসারের আশার আলো।

প্রায় ২০ বছর ধরে শরবত বিক্রি করছেন কাওছার মিয়া। শুরুটা হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে, পরে কাজের টানে তিনি ঘুরেছেন নানা জায়গায়। ময়মনসিংহ শহরে চার বছর, কুমিল্লায় পাঁচ বছর, আর গত ১১ বছর ধরে নান্দাইলেই গড়ে উঠেছে তাঁর জীবিকা। এখানকার মানুষও তাঁকে চেনে ‘শরবতওয়ালা কাওছার’ নামে।

প্রতিদিন গড়ে তিনি ২৫০ থেকে ২৬০ গ্লাস শরবত বিক্রি করেন। প্রতি গ্লাসের দাম ১০ টাকা। এতে প্রতিদিন তাঁর বিক্রি দাঁড়ায় ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। তবে এর পুরোটা হাতে থাকে না, কারণ উপকরণ কিনতে প্রতিদিন গড়ে খরচ হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। সংসারের অন্যান্য খরচ আর সন্তানদের লেখাপড়া মেটাতে তাঁকে হিসাব মেলাতে হয় কষ্ট করে।

কাওছার মিয়ার শরবত জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ এর প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান। তাঁর শরবতে থাকে—

  • এলোভেরা (ঘৃতকুমারী)

  • শিমুলের মূল

  • উলটকম্বল

  • বেল সুট

  • ত্রিফলা

  • ইসবগুলের ভুষি

  • চিরতা ও চিনি

এসব ভেষজ উপাদান শরীর ঠাণ্ডা রাখে, হজমে সহায়তা করে এবং গরমে প্রশান্তি আনে। তাই তাঁর শরবত কেবল তৃষ্ণা নিবারণ নয়, স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবেও জনপ্রিয়।

গরমের দিনে অল্প খরচে তৃষ্ণা মেটানো মানুষের কাছে আশীর্বাদের মতো। নান্দাইলের মানুষও কাওছার মিয়ার শরবতের উপর আস্থা রেখেছেন। গ্রাহকেরা বলেন, “কাওছার ভাইয়ের শরবত শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং শরীর ঠাণ্ডা রাখে। গরমে ক্লান্তি দূর করতে এর জুড়ি নেই।”

শুরুতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাঁকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বৃষ্টির দিনে বিক্রি কমে গেলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তবুও হাল ছাড়েননি। ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমই তাঁকে আজ এই অবস্থানে এনেছে।

তিনি বলেন,
“শরবত বিক্রি আমার কাছে শুধু ব্যবসা নয়, বরং জীবনের ভরসা। এই শরবতের গ্লাসেই আমার সংসারের আলো জ্বলে। সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারছি। আশা করি ওরা বড় হয়ে ভালো মানুষ হবে।”

কাওছার মিয়া চান, একদিন তাঁর সন্তানরা লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হোক। তখন হয়তো সংসারের ভার কিছুটা হালকা হবে। তবে তিনি শরবত বিক্রি ছাড়তে চান না, কারণ এটি তাঁর পরিচয়ের অংশ হয়ে গেছে।

আজকের ব্যস্ত সমাজে হয়তো তাঁর গল্প তেমন আলোচিত হয় না। কিন্তু কাওছার মিয়ার মতো মানুষরা প্রতিদিন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সামান্য পরিশ্রমের বিনিময়ে স্বাস্থ্যকর পানীয় সরবরাহ করছেন। তাঁরা সমাজের অচেনা নায়ক, যাদের অবদান আমরা প্রায়ই অবহেলা করি।

রোদে-ঝড়ে, ধুলো-বৃষ্টিতে পথ চলা এই মানুষটির শরবতের প্রতিটি গ্লাস শুধু পানীয় নয়, বরং একটি পরিবারের হাসি-খুশি টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার। কাওছার মিয়া প্রমাণ করেছেন—ছোট্ট পেশাও বড় স্বপ্নকে টিকিয়ে রাখতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট