নীলফামারী প্রতিনিধি:
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নীলফামারীর ডিমলায় এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। উপজেলার ৭৬টি মণ্ডপে প্রতিমা স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে, চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা। প্রতিমা শিল্পীদের সৃজনশীলতায় রঙিন হয়ে উঠেছে প্রতিটি প্রতিমা।
আজ মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া পাঁচ দিনের এই মহোৎসব শেষ হবে আগামী ২ অক্টোবর, বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে।
শিল্পীরা জানিয়েছেন, একজন শিল্পী গড়ে ৫-৬টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করেন। প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে খরচ হয় ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক উপকরণ সরবরাহ করলেও শিল্পীদের নিপুণতায় প্রতিমা হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত।
গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ি হাট এলাকা ধর্মীয় সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দুর্গামন্দির, কালীমন্দির, বিষ্ণুমন্দির ও শুটিবাড়ি হাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পাশাপাশি অবস্থান করছে। বহু বছর ধরে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করছেন। নামাজ ও আজানের সময় সাময়িকভাবে পূজার কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রচলন ভ্রাতৃত্ব ও সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পূজা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনসার, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিটি মণ্ডপে বিদ্যুৎ, সিসি ক্যামেরা, স্বেচ্ছাসেবক ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নীলফামারী জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন বলেন, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কোনো চেষ্টা সফল হবে না। সনাতনী ভাইবোনেরা নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করবেন।”
ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলে এলাহী জানান, পূজার নিরাপত্তা তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে আনসার ও গ্রাম পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে, আর গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি মোবাইল টিম, ডিবি পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা মাঠে নজরদারি চালাচ্ছেন।
মণ্ডপের আলোর ঝলকানি, শিশুদের উল্লাস আর প্রতিমার শোভা মিলিয়ে ডিমলার দুর্গাপূজা এখন শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।