আবুল হাশেম, রাজশাহী ব্যুরো:
রাজশাহী মহানগরীতে বহুতল ভবন নির্মাণে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)-এর উদাসীনতা ও দুর্বল তদারকির কারণে অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালা মানা তো দূরের কথা, এখন ১২ থেকে ১৪টি তথাকথিত “টাওয়ার” নামের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান একের পর এক ভবন গড়ে তুলছে—কোনো প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই।
সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এখন আবাসন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। তারা নিয়ম অমান্য করে বহুতল ভবন নির্মাণকে ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আরডিএর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দায়িত্বে থেকে পদোন্নতি নিয়েছেন, কিন্তু রেখে গেছেন নকশা অনুমোদনজনিত নানা বিতর্ক।
সূত্র জানায়, মহানগর ও আশপাশের উপজেলাগুলোর আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের নকশা অনুমোদনের দায়িত্ব আরডিএর। কিন্তু অভিযোগ আছে, পিয়ন থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত ‘বিশেষ সুবিধা’ দিলেই অনুমোদন মেলে সহজেই।
বিগত কয়েক বছরে আরডিএ প্রায় দেড় হাজারের বেশি ৮ থেকে ২০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ভবন নির্মিত হয়েছে অনুমোদিত নকশা অমান্য করে।
নগরীর নতুন বিলশিমলা এলাকায় ফুটপাত দখল করে অন্যের জায়গার উপর ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে মমিন উদ্দিন ও তার ভাই পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে।
আরডিএ ২০২4 সালের ১৮ আগস্ট তিন মাসের মধ্যে ভবন অপসারণের নোটিশ দিলেও, তারা এখনো কর্ণপাত করেননি।
ভবন মালিকরা জানান,
“আমরা আরডিএর বিরুদ্ধে মামলা করেছি, তারা চাইলে ভেঙে দিক। আমরা আমাদের মতো কাজ করছি।”
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা সোহরাব উদ্দিনের ছেলে লুতফর রহমান লালু ভবনটি অপসারণ ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড বড় বনগ্রামে “বিসমিল্লাহ টাওয়ার” নামে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন রাজশাহী ট্রেজারি শাখার কর্মকর্তা সাজাহান খানসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা। এলাকাবাসীর অভিযোগ—ইমারত নির্মাণ আইন মানা হচ্ছে না, এমনকি বিলবোর্ডে নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্যও প্রদর্শন করা হয়নি।
এ বিষয়ে সাজাহান খান বলেন,
“রাজশাহীতে কে নিয়ম মেনে ভবন করছে? আমরা নিয়ম মেনে কাজ করছি, এটা দেখবে আরডিএ।”
এছাড়া ইসলামী হাসপাতাল সংলগ্ন উমরপুর এলাকায় আবাসন ব্যবসায়ী মামুন “লন্ডন সিটি টাওয়ার” ও “মরিয়ম টাওয়ার”সহ একাধিক ভবন নির্মাণ করছেন। অনুমোদনের তুলনায় বাস্তবে নির্মিত ভবনের সংখ্যা ও কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী সাত তলার বেশি ভবনে আগুন শনাক্তকরণ যন্ত্র, ধোঁয়া নির্গমন ও পানি ছিটানোর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজশাহীর অধিকাংশ বহুতল ভবনে এসবের কোনো ব্যবস্থা নেই।
এ বিষয়ে আরডিএর নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ তারিক বলেন,
“রাজশাহীতে নতুন করে অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। অনিয়মের অভিযোগ আসছে, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর চিঠি দিয়ে সতর্ক করছি এবং আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভবন নির্মাণে অনিয়ম রোধে আমাদের অভিযান চলমান।”
বিশ্লেষকদের মতে, আরডিএর তদারকি জোরদার না হলে রাজশাহীতে নিরাপত্তাহীন, অগোছালো নগরায়ণ ভবিষ্যতে বড় ঝুঁকি বয়ে আনবে।