শরিফা বেগম শিউলী
রংপুর প্রতিনিধি:
গণআন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে রংপুরে পালন করা হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের আত্মত্যাগের দিনটি স্মরণে এবারও আয়োজিত হয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি।
বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়ায় শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচির সূচনা হয়।
এ সময় শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন,
“আবু সাঈদের আত্মত্যাগ বিশ্ববিদ্যালয় কখনও ভুলে যাবে না। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে আমরা এই হত্যার বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।”
এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ সাঈদের বাবা-মা। তারা বলেন,
“আমাদের সন্তানের রক্ত যেন ব্যর্থ না হয়, আমরা চাই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং তার হত্যার বিচার।”
এরপর সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
দিবসটি উপলক্ষে আজ উদ্বোধন করা হচ্ছে আবু সাঈদ তোরণ এবং একটি মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর। একই সঙ্গে যে স্থানে তিনি প্রাণ হারান, সেই স্থানকে ‘আবু সাঈদ চত্ত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা ও বিশেষ অতিথিরা। উপস্থিত ছিলেন—
আইন ও বিচার সংসদের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল
শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলসহ দিনব্যাপী নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রংপুরজুড়ে শহীদ সাঈদের স্মরণে তৈরি হয়েছে এক আবেগঘন পরিবেশ। সাধারণ মানুষের মুখেও উচ্চারিত হচ্ছে— “আবু সাঈদ বেঁচে থাকুক সংগ্রামের প্রতীক হয়ে।”