আবুল হাশেম
রাজশাহী ব্যুরো:
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শওকত শরীফের ছয় বছর বয়সী শিশুপুত্র আবরারকে (৬) নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নে নিজ বাড়ির অদূরে একটি পাটক্ষেতের পাশে ঘাসের ভেতর থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। সাধারণ মানুষ হতবাক হয়ে পড়েছেন— কে বা কারা এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটাল একটি নিষ্পাপ শিশুকে নিয়ে!
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবরার প্রতিদিনের মতো বাড়ির উঠানে খেলছিল। তার সঙ্গে আরও দুই শিশু মেয়ে খেলায় মগ্ন ছিল। হঠাৎ সন্ধ্যার পর থেকেই আবরার নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করলে সন্দেহভাজন হিসেবে আবরারের সঙ্গে থাকা দুই শিশুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বেলপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান,
“শিশুটিকে খুঁজে না পেয়ে যাদের সঙ্গে শেষবার খেলছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একসময় একটি মেয়ে শিশু জানায়, সে আবরারকে কোথায় দেখেছে। শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে প্রায় দেড়শ গজ দূরে পাটক্ষেতের পাশের হাইব্রিড ঘাসের জমিতে গেলে আবরারের মৃতদেহ দেখতে পান।”
আবরারের পরিবার পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ডা. শওকত শরীফ একজন মানবিক ও সৎ চিকিৎসক হিসেবে এলাকাবাসীর মধ্যে পরিচিত। নিজের সন্তানকে এভাবে হারিয়ে তিনি বাকরুদ্ধ। এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পুলিশ বলছে,
“ঘটনার তদন্ত চলছে। যেহেতু শিশুটি খেলছিল তার পরিচিত শিশুদের সঙ্গেই, তাই ঘটনাটি হয়তো পূর্বপরিকল্পিত কোনো পারিবারিক শত্রুতা, বা শিশুদের মধ্যেই কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকেও হতে পারে। তবে সব দিক বিবেচনা করে তদন্ত করা হচ্ছে।”
স্থানীয়দের অনেকেই শিশুটিকে চিনতেন। তারা বলছেন, আবরার ছিল খুবই ভদ্র ও মিশুক। কারও সঙ্গে ঝগড়া করত না।
এক প্রতিবেশী বলেন,
“এই ছেলেটা কারো ক্ষতি করত না। ওকে যারা হত্যা করেছে, তারা মানুষরূপী দানব।”
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। প্রাথমিকভাবে মরদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তবে হত্যার প্রকৃত কারণ জানতে অপেক্ষা করতে হবে রিপোর্টের জন্য।
বেলপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন,
“আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। সন্দেহভাজন শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের পরিবারকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে।”
একজন নিরীহ শিশু, যার সামনে ছিল একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ, তাকে অকালে এভাবে হারানো— শুধু এক পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্যই দুঃখজনক ও গভীর ক্ষত। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন দ্রুত হয়— এটাই এখন সবার প্রত্যাশা।