মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “ঝিনাইগাতী থেকে যা কিছু দেখেছি”। সংগঠনটির উদ্যোগে শারীরিক প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম (৫৫) কে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা উপহার দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অটোরিক্সাটির চাবি রফিকুলের হাতে তুলে দেওয়া হয়।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অটোরিক্সার চাবি হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন—
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সানজা হক সানি
খান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুজন খান
গোল্ডেন কো-অপারেটিভের প্রতিনিধি মামুন মিয়া
“ডোনেট ২০ টাকা” প্রতিনিধি হাসিব আল তুহিন
“ভয়েস অব ঝিনাইগাতী” প্রতিনিধি জাহিদুল হক মনির
“ঝিনাইগাতী থেকে যা কিছু দেখেছি” সংগঠনের প্রতিনিধি আতিকুর রহমান খাঁন
“ঝিনাইগাতী হেল্পলাইন” এর মোরাদ হোসেন (চাঁন)
“আলোর সন্ধানে (আসঝি)” প্রতিনিধি আশিকুর রহমান আশিক
“বিউটি অব ঝিনাইগাতী” প্রতিনিধি নিবির আল দীন
সহ আরও অনেকে।রফিকুলের সংগ্রামের গল্প
ঝিনাইগাতীর ঘাগড়া ইউনিয়নের কবিরাজ পাড়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি একটি পুরোনো প্যাডেল রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। চার সদস্যের পরিবার নিয়ে কোনোরকমে দিন পার করতেন। ডিজিটাল যুগে যেখানে সবাই ব্যাটারি চালিত যানবাহনে অভ্যস্ত, সেখানে প্যাডেল রিক্সা চালিয়ে রোজগার করা তার পক্ষে হয়ে উঠছিল দুঃসাধ্য।
এই অসহায় পরিস্থিতিতে রফিকুলের পাশে দাঁড়ায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “ঝিনাইগাতী থেকে যা কিছু দেখেছি”।সংগঠনের মানবিক উদ্যোগ
এই সংগঠনের প্রতিনিধিরা, বিশেষ করে আতিকুর রহমান খান, সিয়াম আহমেদ, হুমায়ুন কবির ও রাকিব হাসান মিলে রফিকুলের জন্য অটোরিক্সা সংগ্রহ করে তা প্রদান করেন। তারা বলেন,
“আমরা শুধু দেখেই ক্ষান্ত থাকি না, চেষ্টা করি সমস্যার সমাধানে এগিয়ে যেতে। সমাজের যে কোন অবহেলিত বা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের লক্ষ্য।”ইউএনও’র প্রশংসা
প্রধান অতিথি ইউএনও মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন,
“এটি নিঃসন্দেহে একটি অনুকরণীয় উদ্যোগ। যারা এই রকম মানবিক কাজে অংশ নিয়েছেন, তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সবসময় মানবিক কাজে সহযোগিতা থাকবে।”রফিকুলের কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা
অটোরিক্সা পেয়ে আবেগাপ্লুত রফিকুল ইসলাম বলেন,
“এতদিন শুধু বেঁচে থাকার জন্য রিক্সা চালাতাম, এখন হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাবো। এই অটোরিক্সাটা আমার জীবনের বড় পাওয়া। যারা পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের জন্য দোয়া করি।”উপসংহার
“ঝিনাইগাতী থেকে যা কিছু দেখেছি” শুধু একটি ফেসবুক পেজ বা স্বেচ্ছাসেবী দল নয়— এটি এখন এক মানবিক উদ্যোগের নাম। প্রতিবন্ধী রফিকুলের জীবনে তারা যে আশার আলো জ্বালিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে সমাজে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। সমাজের অন্যান্য সংগঠন ও সচেতন মানুষও যদি এমন কাজে এগিয়ে আসে, তবে একটি মানবিক, সহানুভূতিশীল সমাজ গঠিত হবে— এটাই সবার প্রত্যাশা।