মনজু হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার:
পঞ্চগড় সদর উপজেলার তুলারডাঙ্গা গ্রামে স্বামী মোস্তফিজুর রহমান দুলাল (৩৫) হত্যার অভিযোগে স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার জবা (৩০) ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত রবিবার (২০ জুলাই) নিহত দুলালের মা মোছাঃ মর্জিনা বেওয়া পঞ্চগড় সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে নিহতের স্ত্রী জবা, তার ভাই তানভির হোসেন তনি (৩৫), বোন ফাইজা আক্তার (২৩), ও মা মোছাঃ তনজিনা আক্তার (৬৫)। এরা সবাই সদর উপজেলার মিলগেট ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা।
পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তৈয়ব আলী সরকার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “লাশের ময়নাতদন্ত রংপুরে সম্পন্ন হচ্ছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তদন্তের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১১ বছর আগে মোস্তফিজুর রহমান দুলালের সঙ্গে ফেরদৌসি আক্তার জবার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ১০ বছর ও ২ বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর দুলাল নিজের মায়ের বাড়ি বিক্রি করে শ্বশুরবাড়ির পাশে বসতঘর তৈরি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে দুলালের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশও হয়। ১৮ জুলাই (শুক্রবার) সকালে এজাহারভুক্ত আসামিসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫-৭ জন দুলালের বাড়িতে গিয়ে লোহার রড, বাঁশের লাঠি দিয়ে হামলা চালায়।
দুলালের মুখ, বুক, পেট, পা, বাম হাত, কাঁধ ও থুতনিতে আঘাতের দাগ পাওয়া যায়। এমনকি তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টাও করা হয়। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অভিযুক্তরা তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসক অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
রংপুরে নেওয়ার পর দুলালকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার পর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে যায়।
ভিকটিমের মা মর্জিনা বেওয়া বলেন, “ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই।”
মোস্তফিজুর রহমানের বড় বোন কুলসুমও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে বলেন, “ভাইয়ের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। এটি আত্মহত্যা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা।”
জানা গেছে, অভিযুক্ত ফেরদৌসি আক্তার জবা পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে স্টোর কিপার হিসেবে এবং তার ভাই তানভির হোসেন তনি ইলেকট্রিশিয়ান পদে কর্মরত। ঘটনার পর তাদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী এ ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।