মনিরুজ্জামান লিমন, বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি:
জামালপুরের বকশীগঞ্জে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। উলফাতুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আলো সাথী (১৩) বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। সোমবার (২১ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে বিদ্যালয় চত্বরে এই ঘটনা ঘটে, যা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
আহত ছাত্রী আলো সাথী বকশীগঞ্জ পৌরসভার জেলখানা রোড এলাকার বাসিন্দা বাবু মিয়ার মেয়ে। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেলে আলো সাথী হঠাৎ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবনের ওপরে উঠে যায় এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিচে ঝাঁপ দেন। তার সহপাঠীরা চিৎকার শুরু করলে শিক্ষক ও কর্মচারীরা দৌড়ে এসে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন।
ঘটনার কারণ সম্পর্কে তার সহপাঠীরা মুখ খুলতে নারাজ। কেউ কেউ বলছে, মেয়েটির মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে মানসিক অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে স্থানীয়দের ধারণা এটি আত্মহত্যার চেষ্টা হতে পারে।
ঘটনার পরপরই বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ছয়তলা ভবনের একটি শ্রেণিকক্ষের বারান্দা থেকে রক্তমাখা ব্লেড ও একটি রক্তাক্ত স্কার্ফ উদ্ধার করে। পুলিশ এ ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, “ঘটনার বিষয়ে একজন উপ-পরিদর্শককে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে মনে হলেও আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি। আহত শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার উন্নতির পর তার বক্তব্য নেওয়া হবে।”
ঘটনাটি জানার পর অনেকেই বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যপরীক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেক অভিভাবক মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের আরও সচেতন হওয়া দরকার।
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে সাংবাদিকরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনেই ফোন কেটে দেন, যা রহস্য ঘনীভূত করেছে।
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অভিভাবক ও সচেতন মহল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্কুল প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন।