২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, এবারের বাজেট বাস্তবসম্মত ও শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়নের পথে হাঁটবো না। বরং এমন একটি বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে যা আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও বাস্তবায়নযোগ্য ও কার্যকর হবে।”
রোববার (১৮ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাজেট ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা। আমরা রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছি এবং চেষ্টা করছি সামগ্রিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে।”
তিনি উল্লেখ করেন, টাকা ছাপানোর মতো সিদ্ধান্ত নিলেও তার সরাসরি প্রভাব হয়তো সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় না, তবে পরবর্তীতে মূল্যস্ফীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একইভাবে বেতন বৃদ্ধি করলেও তা মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলে। তাই এবারের বাজেট দায়িত্বশীলভাবে তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাজেট বাস্তবায়নে সতর্কতা ও সমালোচনা
বৈদেশিক ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “এমন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে না যা দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পরিশোধে ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তবে স্বল্প সুদের প্রকল্প, যেমন মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে জাপানের সহায়তায় বিনিয়োগ চলছে।”
তিনি আরও জানান, এবারের বাজেট ছোট হলেও তা বাস্তবসম্মত এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। স্বাস্থ্যখাতে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে, তবে ডাক্তার সংকট রয়ে গেছে। এই খাতের পরিচালন ব্যয় মেটানোর বিষয়েও সরকার নজর দেবে। শিক্ষা খাতেও একই চিত্র—স্কুল রয়েছে, তবে সেবার ঘাটতি রয়েছে।
চলমান প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ
চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অনেককেই অকার্যকর আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এডিপির বেশ কিছু প্রকল্প ধীরগতিতে চলছে। অনেক প্রকল্প আছে, যেগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট হচ্ছে—না এগুলো পুরোপুরি কার্যকর, না-বা বাতিলযোগ্য। এসব প্রকল্প সুপরিকল্পিত নয়।”
তিনি কর্ণফুলী টানেল ও ঢাকা-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, “টানেল পেরিয়ে গন্তব্য অজানা—কেবল রিসোর্টে যাওয়ার সুবিধার জন্য টানেল বানানো হয়েছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে। বিআরটি প্রকল্পেও দুর্ভোগ কমেনি।”
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও বাকি কাজ শেষ করতে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। নতুন করে কোরিয়া থেকে বাস আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে, তাতেও একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে। তিনি বলেন, “নিজের বাড়ির লিফট নষ্ট হলে তা ঠিক করতে কষ্ট হয়, এই প্রকল্পের লিফট ঠিক রাখা কতটা সম্ভব, সেটাও ভাবনার বিষয়।”
তিনি ঈদ সামনে রেখে বিআরটি প্রকল্পের যন্ত্রপাতি সরিয়ে রাস্তাগুলো সাধারণ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান, যেন ঈদে জনদুর্ভোগ না বাড়ে।