আবুল হাশেম, রাজশাহী ব্যুরো:
রাজশাহীর খ্যাতনামা আম উৎপাদন এখন হুমকির মুখে। অধিক ফলনের আশায় গাছে মাত্রাতিরিক্ত হরমোন প্রয়োগ করায় আম গাছ মরে যাচ্ছে, আম ধরছে না, এমনকি অনেক বাগান কেটে ফেলা হচ্ছে।
চারঘাট ও বাঘা উপজেলার আমচাষিরা জানান, ‘প্যাকলোবুট্রাজল’ নামের হরমোন ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে বেশি মুকুল ও গুটি এলেও পরে তা ধরে রাখতে পারছে না গাছ। এতে বাগান নষ্ট হচ্ছে এবং চাষিরা পড়ছেন চরম ক্ষতির মুখে।
পাকুড়িয়ার আমচাষি হাফিজুর রহমান জানান, দুই বছরের জন্য তার বাগান লিজ দিলেও শর্ত না মেনে লিজধারী গোপনে হরমোন প্রয়োগ করেন। এতে এ বছর আম টেকেনি, বরং ১৩টি গাছ মারা গেছে।
ZBNF এর জরিপ বলছে, গত এক বছরে রাজশাহীর চারঘাটে ৩৭ হেক্টর ও বাঘায় ৩৯ হেক্টর আমবাগান হরমোনে ক্ষতিগ্রস্ত। ৭ হাজার ৬০০টি গাছ ইতোমধ্যে মারা গেছে।
বাঘার আম ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, “দুই বছরের জন্য লিজ নিয়ে বিনিয়োগ ফেরত পেতে হরমোন ব্যবহার করতেই হয়। ক্রেতারাও সুন্দর সাইজ ও রঙ চায়।”
রাজশাহীর ৯ উপজেলায় রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর আমবাগান। গত দুই বছরে প্রায় ১৪০ হেক্টর জমির গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, “চাষিরা প্রশিক্ষণ ছাড়াই হরমোন ব্যবহার করছেন, এতে গাছের দারুণ ক্ষতি হচ্ছে।”
রাজশাহীর আম শিল্পে ‘দিগুন লাভ’ এর মোহে পড়ে হরমোন এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশিক্ষণহীন ব্যবহারে গাছ মরছে, উৎপাদন কমছে, ক্ষতির মুখে পড়ছেন চাষি ও ব্যবসায়ী উভয়ই। প্রয়োজন এখন সচেতনতা, প্রশিক্ষণ এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ।