1. admin@newsgrambangla.com : নিউজ গ্রামবাংলা :
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শেরপুরে যুবদল নেতা হোসেন আলীকে বহিষ্কার: চাঁদাবাজির অভিযোগে কেন্দ্রের কঠোর সিদ্ধান্ত বাকেরগঞ্জে চরামদ্দি ও চরাদী ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন সম্পন্ন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচিত রাজশাহীর বাঘায় কমিউনিটি ক্লিনিকে চুরি: জনগণের সেবাপ্রতিষ্ঠানে নির্মম আঘাত নালিতাবাড়ীতে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ফজলুর রহমান তারাকে গণসংবর্ধনা, নেতাকর্মীদের ঢল “আমার দেশ” সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মায়ের রুহের মাগফিরাত কামনায় বাকেরগঞ্জে দোয়া-মিলাদ কাঁঠালের উপকারিতা: সুস্বাদু ফলের ভেতরে লুকানো পুষ্টির ভাণ্ডার রাজশাহীর পুঠিয়ার ধোপাপাড়ায় শতবর্ষী কাঁচা সড়ক যেন অভিশাপ: চরম জনদুর্ভোগেও নিরব প্রশাসন রাজশাহীতে ভূয়া পুলিশ পরিচয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, মূলহোতা গ্রেফতার শেরপুরে জাতীয়তাবাদী ব্যবসায়ী দলের মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত নীলফামারীর ঐতিহ্যবাহী নীল কুঠিতে হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধন করলেন লালনকন্যা সালমা

রাজশাহীর পুঠিয়ার ধোপাপাড়ায় শতবর্ষী কাঁচা সড়ক যেন অভিশাপ: চরম জনদুর্ভোগেও নিরব প্রশাসন

নিউজ গ্রামবাংলা ডেস্ক :
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর পুঠিয়ায় ধোপাপাড়ার কাঁচা রাস্তায় হাঁটু কাদা ভেদ করে হেঁটে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা ও পথচারীরা।
শতবর্ষী ধোপাপাড়া সড়কে বর্ষায় হাঁটুসমান কাদা—জনদুর্ভোগে অতিষ্ঠ পুঠিয়ার হাজারো মানুষ।

আবুল হাশেম
রাজশাহী ব্যুরো:

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ও ভাল্লুকগাছি ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক—ধোপাপাড়া বাজার থেকে নলপুকুরিয়া হয়ে এসআরজি বটতলা পর্যন্ত—দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাঁচা রাস্তা এখন স্থানীয় জনগণের কাছে যেন এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। শত বছরের পুরনো এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে পাকা করার দাবি উঠলেও আজও তা রয়ে গেছে অযত্নে-অবহেলায়।

একদিকে শুকনো মৌসুমে ধুলোর ঝড়, অন্যদিকে বর্ষায় হাঁটুসমান কাদা—এই দ্বৈত যন্ত্রণায় ভোগান্তিতে পড়ে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষক, গর্ভবতী নারী, রোগী, ব্যবসায়ী—সবারই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পথ।

শতবর্ষী অবহেলার ইতিহাস

এই সড়কটি শুধু ধোপাপাড়া বা নলপুকুরিয়া অঞ্চলের নয়; এটি দুটি ইউনিয়নের মধ্যকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত মাধ্যম। ধোপাপাড়া বাজার, মসজিদ, ঈদগাহ, গোরস্থান, ভূমি অফিস, বেসরকারি ব্যাংকিং সেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ এই রাস্তাকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে।

তবে অবাক করা বিষয় হলো, এত গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কটি কোনো আধুনিকায়নের মুখ দেখেনি। স্থানীয়দের মতে, এটি ব্রিটিশ আমল থেকেই কাঁচা রয়েছে। মাঝে মাঝে একটু মাটি ফেলে, নামমাত্র সংস্কার হলেও, তা বৃষ্টির প্রথম জলেই বিলীন হয়ে যায়।

সরেজমিন চিত্র: ধুলো-কাদা আর দীর্ঘশ্বাস

সাম্প্রতিক বর্ষার এক সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কজুড়ে পিচ্ছিল কাদা, পানি জমে থাকা গর্ত আর ভেঙে যাওয়া পাশের বাঁধ। পথচারীদের হাতে স্যান্ডেল, পায়ে কাদা লেপটে থাকা অবস্থা, শিশুদের কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হাঁটু পানি পেরিয়ে স্কুল যাত্রা—এই যেন নিত্যদিনের দৃশ্য।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,

“এটা আমাদের কাছে একটা অভিশপ্ত রাস্তা। যেদিকে তাকাই শুধু কষ্ট আর হতাশা। কতবার ভোট এসেছে, কত নেতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কেউ কথা রাখেনি।”

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব

এই রাস্তাটির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপর। ধোপাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ফারিয়া রহমান জানায়,

“বৃষ্টি হলে পা ভিজেই স্কুলে আসি। অনেক সময় পড়ে যাই। কেউ কেউ কাদার জন্য স্কুলেই আসতে পারে না।”

একই কথা বলেন ধোপাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সজীব কুমার সরকার। তার ভাষায়,

“শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বড় কারণ এই রাস্তাটি। পরীক্ষার মৌসুমেও যারা দূর গ্রাম থেকে আসে, তাদের জন্য এটি রীতিমতো যুদ্ধ।”

এছাড়াও স্থানীয় রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছানো দুরূহ হয়ে পড়ে। হুইলচেয়ার বা অ্যাম্বুলেন্সে চলাচলের উপযোগী নয় এই রাস্তা। অনেক সময় রোগীকে হাত ধরে হেঁটে আনতে হয়। বিশেষ করে প্রসূতি মা ও বৃদ্ধদের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হয়।

কৃষি ও অর্থনীতির ক্ষতি

এই এলাকার প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। ধান, সবজি, মাছ—সবই উৎপন্ন হয় এই অঞ্চলে। কিন্তু সেই ফসল বা মাছ বাজারে নিতে হলে ভোগ করতে হয় দুর্ভোগ। স্থানীয় মৎস্যচাষি আব্দুল হান্নান বলেন,

“মাঝেমাঝে তো রাস্তা দিয়ে রিকশাও চলে না। ভ্যানে করে সবজি বা মাছ নিতে গেলে বেশি খরচ পড়ে। যদি রাস্তা পাকা হতো, কৃষকরা অনেক লাভবান হতো।”

জনপ্রতিনিধিদের দায় এড়ানো?

ভাল্লুকগাছি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আনিছুর রহমান বলেন,

“এই রাস্তাটি যে অবহেলিত—এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমি বহুবার উপজেলা অফিসে গেছি, মাপঝোকও হয়েছে। কিন্তু কেন যে কাজ হয় না, বুঝতে পারছি না।”

অবস্থার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তেমন তৎপর নয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। গত কয়েক বছরে একাধিকবার ইউপি চেয়ারম্যান, এমপি ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনা হলেও তা এখন পর্যন্ত কেবল আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ।

প্রশাসনের ব্যাখ্যা

এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ. কে. এম. নূর হোসেন নির্ঝর বলেন,

“আমি নিজেও এই রাস্তাটি করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু ধোপাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেসময় অন্য একটি প্রকল্পের বাজেট নিয়ে নেন। তারপর থেকে বিষয়টি পিছিয়ে গেছে। তবে আমি আবার দেখছি, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন—একটি রাস্তার জন্য বাজেট একাধিকবার বরাদ্দ সম্ভব না? মানুষ বছরের পর বছর ধরে কষ্টে আছে, অথচ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

জনমনে ক্ষোভ, দাবি দ্রুত সংস্কারের

জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের এই দায়সারা মনোভাবের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কৃষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি—এই রাস্তাটি দ্রুত পাকা করতে হবে।

বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সচেতন নাগরিকরা সোচ্চার হচ্ছেন, যাতে উপজেলা কিংবা জেলা প্রশাসনের টেবিল থেকে এই রাস্তার ফাইল আর হারিয়ে না যায়।

উপসংহার

ধোপাপাড়া এলাকার এই শতবর্ষী কাঁচা সড়ক যেন বাস্তব জীবনের এক ‘অভিশপ্ত পথ’। এ পথ ধরে শুধু মানুষ নয়, ভাঙে তাদের স্বপ্ন, আশাভরসা। সময় এসেছে, জনগণের এই দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বনি শোনা হোক উন্নয়নের কর্ণধারদের কানে।

প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি বাস্তব পদক্ষেপ না নেন, তবে এই অবহেলা শুধু একটি রাস্তারই নয়—এটি হবে একটি জনগোষ্ঠীর প্রাপ্য উন্নয়ন বঞ্চিত হওয়ার করুণ ইতিহাস।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত নিউজ গ্রামবাংলা-২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট