আবুল হাশেম
রাজশাহী ব্যুরো:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার জোতরাঘব কমিউনিটি ক্লিনিকে এক দুঃখজনক চুরির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দিবাগত রাতে (১২ জুলাই) অজ্ঞাত চোরেরা ক্লিনিকের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যায়। চুরি হওয়া সামগ্রীর মধ্যে ছিল ঔষধ, ব্লাড প্রেশার মেশিন (বিপি মেশিন), ওজন মাপার মেশিনসহ আরও কিছু মূল্যবান চিকিৎসা উপকরণ।
এই চুরি শুধু একটি ক্লিনিকের ক্ষতি নয়, বরং পুরো এলাকার দরিদ্র, অসহায় ও চিকিৎসা নির্ভর জনগণের জন্য একটি বড় ধাক্কা। যে ক্লিনিকে প্রতিদিন গ্রামের গরিব মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে, বিনামূল্যে ওষুধ পায়—সেই প্রতিষ্ঠানই এখন চোরের কবলে!
চুরি-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের মতে, এটি শুধু একটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যর্থতা নয়, বরং সামাজিক অবক্ষয়ের চরম নিদর্শন। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে? ক্লিনিকে কর্মরত সেবিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন ভীত ও হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার আসাদুজ্জামান (আসাদ) বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা বিষয়টি থানায় জানিয়েছি এবং একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। চোর শনাক্ত হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
প্রসঙ্গত, রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে বিগত বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবা বৃদ্ধির ফলে সাধারণ জনগণ উপকৃত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিনামূল্যে চিকিৎসা, গর্ভবতী নারীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, শিশুর টিকাদান এবং সাধারণ রোগ নিরাময়ের কাজ হয়ে থাকে।
তবে এই সেবাদান প্রক্রিয়া যে কতটা অনিরাপদ, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এ ঘটনার মাধ্যমে। প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর উচিত—এই চুরির ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ক্লিনিকগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এ ছাড়া স্থানীয় সচেতন নাগরিকদেরও আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে তারা সরকারি স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রগুলোকে নিজেদের সম্পদ হিসেবে দেখে এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে সচেষ্ট থাকে।
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সরকারি সম্পদ মানে শুধু সরকারি দায় নয়, এ দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকেরও। দেশের প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে চাই সম্মিলিত সামাজিক সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ।