সঞ্জয় দাস, নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক ‘নীল কুঠি’ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য হস্তশিল্প মেলা। পণ্য প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক আবহে ভরপুর এই মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতনামা লোকসংগীত শিল্পী লালনকন্যা সালমা। তার অংশগ্রহণে মেলাটি হয়ে ওঠে এক অপূর্ব সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টায় ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সালমা। পরে মেলার মূল মঞ্চে তিনি পরিবেশন করেন একের পর এক হৃদয়ছোঁয়া গান। তার কণ্ঠে ‘লালনের বাণী’, ভাবগান ও ফোকধর্মী সংগীত শোনে মুগ্ধ হয়ে পড়ে শত শত দর্শক-শ্রোতা। তিনি বলেন, “লোকসংগীত কেবল গান নয়, এটি আমাদের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আত্মিক বন্ধনের বহিঃপ্রকাশ।”
মেলায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার হস্তশিল্পীরা অংশ নিয়েছেন। বাঁশ, বেত, পাট, কাঠ, মাটি ও সুতা দিয়ে তৈরি হস্তশিল্প পণ্যের নানা স্টল ছিল মেলায়। এসব স্টলে স্থানীয় কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি নানান ব্যবহার্য ও সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী প্রদর্শিত হয়। দর্শনার্থীরা আগ্রহভরে স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং কেনাকাটাও করেন।
ডিমলা থেকে আসা দর্শনার্থী মিজানুর রহমান বলেন,
“সালমা আপার গান শুনে মনে হয়েছে, আমাদের লোকজ সংগীত এখনো জীবন্ত। মেলায় আসার আসল তৃপ্তিটা পেয়েছি তার গানে।”
শুধু সংগীত নয়, পুরো মেলাজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা পর্যন্ত উপভোগ করেছেন স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতির প্রাণবন্ত উপস্থিতি। হস্তশিল্প মেলার আয়োজক কমিটির একজন সদস্য জানান, “আমরা চাই নীলফামারীর লোকজ ঐতিহ্য এবং মাটি ও মানুষের শিল্পকর্ম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। এ ধরনের মেলা সেই প্রয়াসেরই অংশ।”
জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের তত্ত্বাবধানে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “এই মেলার মাধ্যমে আমরা নীলফামারীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গ্রামীণ কারুশিল্পের বিকাশে অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছি। মেলাটি আগামীতে আরও বড় পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।”
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানেও আরও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং স্থানীয় শিল্পীদের পুরস্কার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে আয়োজকরা জানান।
এই হস্তশিল্প মেলা শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, এটি হয়ে উঠেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার এক সম্মিলিত উৎসব। সালমার অংশগ্রহণে এই আয়োজনে যোগ হয়েছে এক অন্য মাত্রা—যা নীলফামারীর মানুষের হৃদয়ে দীর্ঘদিন দাগ কেটে থাকবে।