আশিকুর রহমান, গাজীপুর:
গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় সম্প্রতি চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেছে টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা পুলিশ। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিচালিত এই যৌথ অভিযানে মোট ৬০ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট থানা কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ জানায়, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতারের লক্ষ্যে এই অভিযান পরিচালিত হয়। টঙ্গী শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, মার্কেট, গণপরিবহন স্ট্যান্ড এবং অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে এ অভিযান চালানো হয়। চোর, ছিনতাইকারী, মাদক বিক্রেতা ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করতে মাঠে নামে পুলিশ সদস্যদের একাধিক দল।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ ফরিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান,
“আমাদের থানা এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটকে চিহ্নিত করে পরিকল্পিতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মোট ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কেউ কেউ পুরাতন মামলার আসামি আবার কেউ নতুন করে অপরাধে যুক্ত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,
“এদের বেশিরভাগই মাদক ব্যবসা, চুরি এবং ছিনতাইয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আমরা তাদের নামে আগের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করছি। কেউ যেন রাজনৈতিক পরিচয়ে রেহাই না পায়, সে দিকেও নজর রাখা হয়েছে।”
অপরদিকে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইসকান্দার হাবিবুর রহমান জানান,
“পশ্চিম থানার আওতাধীন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমাদের একাধিক টিম কাজ করেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মোট ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
তিনি বলেন,
“এই অপরাধীরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করেই আমরা এই অভিযান পরিচালনা করেছি। আগামীতেও এমন অভিযান চলবে।”
এ ধরনের অভিযানে পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি স্থানীয় সোর্স, সিসিটিভি ফুটেজ এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে টার্গেট করে অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করেছে। অভিযান পরিচালনার সময় কেবলমাত্র সুনির্দিষ্ট অপরাধের প্রমাণ থাকা ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই চলছে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী মামলা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
টঙ্গীর স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের এই চিরুনি অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এলাকার বাসিন্দা সেলিনা বেগম বলেন,
“রাস্তায় চলাফেরা করতেই ভয় লাগত। ছিনতাই, ইভটিজিং এমনকি দোকানে চাঁদাবাজির ঘটনা ছিল নিয়মিত। এখন পুলিশ সক্রিয়ভাবে অভিযান চালানোয় আমরা একটু স্বস্তি পাচ্ছি।”
একইভাবে পেশাজীবী যুবক জাহিদ হাসান বলেন,
“সন্ধ্যার পর দোকান বন্ধ করে দিতে হতো। এখন অন্তত বুঝতে পারছি, পুলিশ মাঠে আছে। আশা করছি, নিয়মিত এ ধরনের অভিযান চললে আমরা অনেকটা নিরাপদে থাকতে পারব।”
পুলিশ জানিয়েছে, টঙ্গী অঞ্চলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের অভিযান চালানো হবে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মাদক, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের প্রবণতা বেশি, সেসব এলাকায় আরও বেশি নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। রাতের বেলা টহল, মোবাইল চেকপোস্ট, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের ধরতে বিশেষ অভিযানও পরিচালিত হবে।
ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন,
“এটি কোনো একদিনের কাজ না। আমরা ধারাবাহিকভাবে অপরাধ দমন করতে চাই। জনগণ সহযোগিতা করলে অবশ্যই আমরা সফল হব।”
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ ও মামলা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে সবাইকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানায় পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুরো গাজীপুর জুড়েই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত রাখতে “জিরো টলারেন্স” নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। টঙ্গী এলাকা এর মধ্যে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখানে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ বারবার বলছে, যেকোনো ধরনের অপরাধ, বিশেষ করে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত তারা।
টঙ্গীতে একদিনে ৬০ জন অপরাধী গ্রেফতার হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে এটি যেন শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক প্রচেষ্টা না হয়ে, নিয়মিত ও পরিকল্পিত কার্যক্রম হিসেবে চালু থাকে—এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর। পুলিশের এমন পদক্ষেপ নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অপরাধ দমনে একটি শক্ত বার্তা দিচ্ছে, যা গাজীপুর তথা সমগ্র দেশের জন্যই ইতিবাচক।