বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি:
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার আলোচিত জামাল খান হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ১০ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ মো. ফারুক হোসেন শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এ নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে যাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তারা হলেন—হাফেজ খান, ইউনুস খান, কাওছার খান, মোনায়েম খান, দেলোয়ার খান, আনোয়ার খান, খোকন খান, এলেম খান, এনায়েত খান এবং আরেকজন কাওছার খান।
আসামিপক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ পান্না ও অ্যাডভোকেট মামুন চৌধুরী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের বাগদিয়া গ্রামের ইব্রাহিম খানের পুত্র জামাল খানের সঙ্গে একই গ্রামের ইউনুস খান ও তার পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই পূর্ববিরোধের জের ধরেই গত ৭ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামাল খানকে নিজ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান হাফেজ খান, কাওছার খান ও দেলোয়ার খান।
পরদিন ৮ মে সকালে স্থানীয় গুচ্ছগ্রামের জাকির খানের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে জামাল খানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের গলায় পুরনো কাপড় প্যাঁচানো ছিল এবং ধারণা করা হয়, তাকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় নিহত জামালের ছোট ভাই রাকিব খান বাদী হয়ে ওই রাতেই বাকেরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১০ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়।
ঘটনার পর আসামিরা হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন লাভ করেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার তারা বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। তবে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সকল আসামিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আসামিদের আদালতে হাজিরের সময় বরিশাল আদালত চত্বরে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশি নজরদারি ছিল জোরদার। জামাল খানের স্বজন ও গ্রামবাসীর অনেকে আদালত এলাকায় উপস্থিত ছিলেন এবং জামিন বাতিলে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
নিহত জামাল খানের পরিবারের সদস্যরা বলেন, “আমরা আশা করছিলাম ন্যায়বিচার পাবো। আজ আদালতের সিদ্ধান্তে আমাদের মন কিছুটা হলেও শান্ত হয়েছে। আমরা চাই, দোষীরা দ্রুত কঠিন শাস্তি পাক।”
স্থানীয় এলাকাবাসীও এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, “ঘটনার পর থেকেই আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে আসছি। নিহতের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও আলামতের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। আদালতের নির্দেশে আজ আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।”