বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি:
“তারুণ্যের সাথে, মানবতার পথে”—এই অনন্য ও সাহসী প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বরিশালের বাকেরগঞ্জে যাত্রা শুরু করল একটি নতুন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইখলাস বাকেরগঞ্জ’। শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে সরকারি বাকেরগঞ্জ কলেজের হলরুমে এক অনাড়ম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও আহ্বায়ক রাজু হাওলাদার রাজন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক নাসির উদ্দিন রোকন ডাকুয়া, আলেম সমাজের প্রতিনিধি হাফেজ আঃ রহিম হাওলাদার এবং প্রবীণ শিক্ষানুরাগী শাহ আলম হাওলাদার।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাকেরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আতাউর রহমান রোমান, সাংবাদিক জসিম হাওলাদার, সামাজিক সংগঠক বেল্লাল হোসেন হাওলাদার, তরুণ উদ্যোক্তা তাহমিদ আহমেদ, শিক্ষাবিদ হাফেজ কাওসার হোসেন, আরিফুর রহমান, এবং মো: মিশকাত ইসলামসহ আরও অনেকে।
সভাপতি রাজু হাওলাদার রাজন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ইখলাস বাকেরগঞ্জ মূলত তারুণ্যের উদ্যম ও মানবিক দায়িত্ববোধকে একত্র করে একটি সুন্দর সমাজ গঠনের প্রয়াস। এই সংগঠনটি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগকালীন সহায়তা, সচেতনতামূলক কার্যক্রম—সবদিকেই আমাদের কার্যক্রম বিস্তৃত হবে।”
তিনি আরও জানান, “আমরা বিশ্বাস করি, সমাজ পরিবর্তনের শক্তি লুকিয়ে আছে আমাদের তরুণদের মাঝেই। তাই এই সংগঠনের প্রত্যেক সদস্য হতে যাচ্ছে সমাজের একজন দায়িত্বশীল মানবিক সৈনিক।”
প্রধান অতিথি অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “বিকশিত সমাজ গঠনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুশৃঙ্খল ও মানবিক মনোভাবসম্পন্ন তরুণ সমাজ। ইখলাস সেই কাজটি শুরু করেছে। আমি চাই, এই সংগঠন বাকেরগঞ্জে একটি স্থায়ী আদর্শ হয়ে উঠুক। আমি ব্যক্তিগতভাবে সংগঠনটির পাশে থাকব সবসময়।”
বিশিষ্ট সমাজসেবক নাসির উদ্দিন রোকন ডাকুয়া বলেন, “বর্তমান সমাজে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনেক। সরকার একা সব কিছু করতে পারে না, তাই সমাজের সচেতন তরুণদের এগিয়ে আসা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। ইখলাস তার সঠিক সময়েই আত্মপ্রকাশ করেছে।”
হাফেজ আ: রহিম হাওলাদার বলেন, “মানবতা, দয়া, সহানুভূতি—এই গুণগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইখলাসকে দরকার ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক আদর্শের ভিত্তি। আমি আশা করি, এই সংগঠন আগামী প্রজন্মের নৈতিক গঠনে ভূমিকা রাখবে।”
বাকেরগঞ্জ উপজেলা বরিশাল জেলার একটি জনবহুল ও ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল হলেও এখনও এখানে অনেক মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা ও মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। তরুণদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের মাধ্যমে এ সমস্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, ইখলাস যেন একদিন মাদক, বাল্যবিবাহ, যৌতুকসহ সামাজিক ব্যাধিগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। সংগঠনটি যেন দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে, এবং একদিন গোটা বাকেরগঞ্জের উন্নয়নের রূপকার হিসেবে পরিচিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচিতি, সংগঠনের রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনাও হয়। অনুষ্ঠান শেষে কেক কাটা ও দলগত চিত্রগ্রহণের মাধ্যমে দিনটির স্মরণীয়তা রক্ষা করা হয়।
তাহমিদ আহমেদ বলেন, “আমি স্বপ্ন দেখছি এমন এক সংগঠনের, যারা মুখে নয়, কাজে প্রমাণ দেবে। ইখলাস বাকেরগঞ্জ সেই আশার প্রতিচ্ছবি।”
কাওসার হোসেন বলেন, “তরুণ সমাজকে মানবিক কাজে যুক্ত করতে পারলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিতভাবে আসবে।”
মিশকাত ইসলাম যোগ করেন, “আজ যে যাত্রা শুরু হলো, তা যেন আগামীতে হাজার তরুণের প্রেরণা হয়ে ওঠে।”
ইখলাস বাকেরগঞ্জের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে:
গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন
ব্লাড ডোনেশন কর্মসূচি
বৃক্ষরোপণ অভিযান
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও নারীর ক্ষমতায়ন
এলাকার গরীব, অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষদের সহায়তা প্রদান
শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য স্কিল ট্রেনিং প্রোগ্রাম
এছাড়াও সমাজে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন ও সেমিনার আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইখলাস বাকেরগঞ্জ শুধু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নয়—এটি একটি স্বপ্ন, একটি উদ্যোগ, একটি সামাজিক আন্দোলন। তরুণদের নেতৃত্বে এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শে পরিচালিত এই সংগঠন আগামীতে বাকেরগঞ্জ তথা বরিশাল অঞ্চলে মানবিক উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। সবার সহযোগিতা পেলে ইখলাস পারবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মুখে হাসি ফুটাতে, নতুন প্রজন্মকে মানবতার পথে নিয়ে যেতে।