মোঃ বেল্লাল হোসাইন নাঈম, স্টাফ রিপোর্টার:
নোয়াখালীর চাটখিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, “যারা নির্বাচন চায় না তারাই পিআর চায়। তারা ভোটকে ভয় পায়, তারেক রহমানের জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচনে পরাজয় অবধারিত।”
তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন চাই, গণতন্ত্র চাই। দেশের স্থিতিশীলতা ফেরাতে জামায়াত, এনসিপি সহ সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিকে আহ্বান জানাই—আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।”
শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের উদ্যোগে খিলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম খালিদ বিন ইসলাম মিহিরের স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার খোকন।
তিনি বলেন, “দেশ এখন গভীর ষড়যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে। দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার হুমকির মুখে। এই ষড়যন্ত্র রুখতে হলে দেশপ্রেমিক সকল দলের সম্মিলিত আন্দোলন দরকার।”
ব্যারিস্টার খোকন প্রয়াত খালিদ বিন ইসলাম মিহিরকে স্মরণ করে বলেন, “বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন সৎ ও আদর্শবান ছিলেন, তেমনই মিহিরও একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও সংগ্রামী রাজনীতিবিদ ছিলেন। রাজনীতিতে থেকে আদর্শ ধরে রাখা এখন বিরল। মিহির সেই বিরল উদাহরণ।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনীতি করতে হলে নিজেকে সৎ রাখতে হবে। থানায় দালালি, সালিশ কিংবা চাঁদাবাজি চলবে না। বিএনপি এমন সংস্কার চায় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে তারেক রহমান ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছেন।”
পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খোকন বলেন, “আপনারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এসব করে কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করতে পারবে না। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি—দলে অপরাধীদের ঠাঁই নেই।”
তিনি জানান, “৫ আগস্টের পর বিএনপিতে অনেক ‘নবাগত নেতা’ ঢুকে পড়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজদের সহায়তা করছে। এই ধরনের লোকদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, “যারা নির্বাচন চায় না, তারা আসলে জনগণের রায়কে ভয় পায়। তারা চায় পিআর বা পাতানো রেজাল্ট, যেটা দিয়ে জনগণকে বোকা বানানো যায়। আসুন, যদি সাহস থাকে, জনপ্রিয়তা যাচাই করতে ভোটে আসুন।”
তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের সমালোচনা করে বলেন, “খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেশের ফ্যাসিবাদ কায়েমে ভূমিকা রেখেছে। দেশের বর্তমান জুলুম-নিপীড়নের পেছনে তারও ভূমিকা আছে। তার বিচার হতে হবে।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, “আপনারা যদি আওয়ামী লীগ বা অন্য দলের কাউকে দেখেন, তার ওপর ব্যক্তিগত আক্রোশে অত্যাচার করবেন না। আমাদের আইন আছে, প্রয়োজন হলে আইনগতভাবে মোকাবিলা করুন। আমাদের রাজনীতি হবে নীতি ও আদর্শভিত্তিক।”
তিনি স্পষ্ট করে দেন—“বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ কোনো সহযোগী সংগঠনের কেউ সন্ত্রাস বা বিশৃঙ্খলায় জড়িত থাকলে তার বিএনপিতে থাকার অধিকার নেই। এ বিষয়ে তারেক রহমানেরও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কেউ শুনবে না, তাহলে তিনি নিজেই ব্যবস্থা নেবেন।”
শোকসভা শেষে খিলপাড়া ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালিদ বিন ইসলাম মিহির ও উত্তরায় মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে থাকার শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।
এছাড়া ব্যারিস্টার খোকন চাটখিল ও সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে সকাল ১০টায় সোনাইমুড়ীর দেওটি ইউনিয়নের পিতাম্বরপুরে বিএনপির একটি নতুন ইউনিয়ন অফিস উদ্বোধন করেন। এরপর বিকেল ৬টায় চাটখিলে এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সোনাইমুড়ীতে ৫ আগস্ট ‘হাসিনা সরকার পতনের’ এক বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় যোগ দেন।
শোকসভায় খিলপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতা তারেক বিন ইসলামের সভাপতিত্বে এবং ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবুর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য এডভোকেট আবু হানিফ, চাটখিল পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তফা কামাল, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলাউদ্দিন ভূঁইয়া, ইমাম হোসেন টিপু, লিয়াকত আলী ভুট্টো, আনিস আহমেদ হানিফ, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল আজম জগলু, মাহমুদুল হাসান শান্ত, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইউসুফ উন নবী বাবু, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আমির হোসেন খোকন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ জালাল, যুবদল নেতা ফয়েজ মোল্লা, কাওসার হামিদ মিন্টু, রবিউল আউয়াল সজিব, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের বক্তব্যে দেশের রাজনীতি, নির্বাচন, শুদ্ধি অভিযান এবং আদর্শিক রাজনীতির যে দিকনির্দেশনা উঠে এসেছে, তা বিএনপির ভবিষ্যৎ রূপরেখায় গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। আদর্শিক রাজনীতির পথে দলীয় শৃঙ্খলা ও সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়ে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেন নতুনভাবে মাঠে নামতে।