আবুল হাশেম
রাজশাহী ব্যুরোঃ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ১ নম্বর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে এক নিরপরাধ পরিবারের ওপর রাতে অভিযানের নামে ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)–এর বিরুদ্ধে। অভিযানের শেষ পর্যায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা ‘ভুল হয়ে গেছে’ বলে স্বীকার করেন এবং অভিযুক্ত বাড়ির শিশুকে দিয়ে তাদের চা ও নাস্তা তৈরি করিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
২৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত প্লট ব্যবসায়ী পিয়ারুল ইসলামের বাড়িতে এ অভিযান চালানো হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযানের মূল উৎস ছিল ‘নাহিদ’ নামের এক দালাল, যার কথায় প্ররোচিত হয়ে ডিএনসি এই অভিযান চালায়। অভিযানে পিয়ারুল ইসলামের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী গোলাপি বেগম (৩৫), কন্যা রুপালি খাতুন (১৩) এবং প্রতিবেশীসহ একাধিক নিরীহ মানুষ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা বাড়ির নারীদের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে মারধর শুরু করেন। গোলাপি বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয় এবং বারবার তার স্বামীর অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। একইভাবে স্কুলছাত্রী রুপালি খাতুনকেও শারীরিক নির্যাতন করা হয়, যার ফলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় বৃদ্ধ পাতান ও যুবক মোজাহারকে চড়-থাপ্পড় ও গালিগালাজ করে অপমান করা হয়।
অভিযান শেষে সকালে বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করার পর কোনো মাদক না পেয়ে অভিযানে অংশ নেওয়া ডিএনসির সদস্যরা বলেন, “ভুল হয়ে গেছে। কিছু মনে করো না। আমাদের চা খাওয়াও।” পরে তাদের চা, বিস্কুট ও মুড়ি পরিবেশন করতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন গোলাপি বেগম। তারা আরও জানান, অভিযানের সময় কোনো গ্রাম পুলিশ বা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সঙ্গে নেওয়া হয়নি—যা নিয়ম অনুযায়ী অপরিহার্য।
অভিযানের সময় নিজেদের পরিচয় গোপন রাখলেও স্থানীয়রা ডিএনসির বিপ্পব, রিপন, ও হাফিজা খাতুনকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে অভিযানে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দালাল নাহিদের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নাহিদ প্রশাসনের সাথে যোগসাজশ করে এলাকায় চাঁদাবাজি ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। তাদের ভাষায়, “এটি একটি নতুন চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের কাজ, যারা নিরীহ পরিবারকে টার্গেট করছে।”
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শক রায়হান নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়েছে।” অভিযুক্ত নাহিদও তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।
তবে রাজশাহী বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, “আমি বিষয়টি জানি না। যদি এ ধরনের কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরীহ কাউকে মারধরের এখতিয়ার আমাদের নেই।”
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা এই অমানবিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।