নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ (৩৯) হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তদন্তে থাকা অন্যদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
শনিবার (১২ জুলাই) পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স ও ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন্স পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এই ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। একটি সভ্য সমাজে প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত, তাদের মধ্যে পাঁচজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতরাতেও একজনকে আটক করা হয়েছে। এর আগেও র্যাব অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করেছে, এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। ডিবির টিমও সক্রিয়ভাবে তদন্তে অংশ নিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের সহিংসতা আমাদের সমাজে বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা যেন এমন পরিস্থিতির দিকে না যাই যেখানে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। এজন্য সমাজের অভিভাবক, শিক্ষক, চিকিৎসক, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে এই অসহিষ্ণুতা কমিয়ে আনতে হবে।”
এ সময় তিনি সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে বা কোনো ঘটনা ঘটলে দয়া করে আইন নিজের হাতে তুলবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান, তারা ব্যবস্থা নেবে।”
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ধীর পদক্ষেপ’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “অনেকেই বলছেন পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—তাহলে পাঁচজন কীভাবে গ্রেফতার হলো? বিমানবন্দরের একটি ঘটনায় এক মহিলাকে যিনি উস্কানি দিয়েছেন, তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। একইভাবে চাঁদপুরের ঘটনায় দোষীদেরও আইনের আওতায় আনা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিনিয়ত কাজ করছি। তবে দেশের প্রতিটি ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে সামাল দেওয়া সবসময় সহজ নয়। কোথাও কোথাও সময় লাগলেও, আমরা চুপ থাকি না—তৎপর থাকি।”
মিটফোর্ডে সোহাগ নামের ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে এমন নৃশংসতায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে ধাপে ধাপে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। তদন্তে হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত বিরোধ ও চাঁদাবাজির সংশ্লিষ্টতার সম্ভাবনা পাওয়া গেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য অনুযায়ী, সরকার ও প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং এই ঘটনায় জড়িত কেউই আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।